ভয়াবহ বন্যায় দেশের ১২ জেলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ির অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিল। ফেনীর ৯১ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া কুমিল্লা, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়িতেও ৮০ শতাংশ টাওয়ার অচল হয়েছিল। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছিল জেলাগুলোর বাসিন্দা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের। বন্যা পরিস্থিতিতে জেলাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায়। ভি-স্যাট ব্যবহার, টাওয়ার সচল রাখতে চালানো জেনারেটরগুলোতে বিনামূল্যে ডিজেল সরবরাহ, ২৪ ঘণ্টা মনিটরিংসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশনায় নিরলস কাজ করেছে বিটিআরসির কর্মীরাও।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গত এলাকাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্কও স্বাভাবিক হচ্ছে। বিটিআরসির সবশেষ তথ্যমতে, জেলাগুলোতে গড়ে ৯৮ শতাংশ টাওয়ার এখন সচল। দু-একদিনের মধ্যে শতভাগ টাওয়ার সচল করা সম্ভব হবে। গত বৃহস্পতিবার (২৯) রাতে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগ এ তথ্য জানায়। সংস্থাটির তথ্যমতে, বন্যাকবলিত ১২ জেলার ১৪ হাজার ৫৫১টি টাওয়ারের মধ্যে এখনো অচল রয়েছে ৩০০টি। বাকি টাওয়া ১৪ হাজার ২৫১ টাওয়ার এখন সচল।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া ফেনী জেলায় ৬৫৩টি টাওয়ারের মধ্যে বর্তমানে অচল রয়েছে মাত্র ৭৩টি। বাকি সব টাওয়ার এখন সচল। সেই হিসাবে ৮৯ শতাংশ টাওয়ারে নেটওয়ার্কে ফিরেছে। এতে ব্যবহারকারীদের তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না।
বিটিআরসির তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ৪ হাজার ২৫৮টি টাওয়ারের মধ্যে ৪ হাজার ২৩১টি সচল। কুমিল্লায় ২ হাজার ৫২৯টির মধ্যে অচল ১৮টি। তাছাড়া নোয়াখালীতে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, লক্ষ্মীপুরে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩ শতাংশ, হবিগঞ্জের ১ দশমিক ৮ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, সিলেটে ১ দশমিক ৮ শতাংশ ও কক্সবাজারে মাত্র ১ শতাংশ টাওয়ার এখনো অচল। গড় হিসাবে ১১ জেলা মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ সাইট অচল। অর্থাৎ, ৯৮ শতাংশ টাওয়ার বর্তমানে নেটওয়ার্কে ফিরেছে। বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারি অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, মোবাইল অপারেটর, টাওয়ারকো অপারেটরদের টেকনিক্যাল জনশক্তি, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, জেনারেটর ও জ্বালানি পরিবহনে সেনাবাহিনী সমন্বয় করায় দ্রুত নেটওয়ার্ক সচল করা সম্ভব হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে জেলাগুলোতে পুরোপুরি সব টাওয়ার সচল করা সম্ভব হবে।