শিল্পা ল আশুলিয়া মাত্র একদিন শান্ত থাকার পর আবারো শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভের মুখে ৭৯টি পোশাক কারখানা ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ডিইপিজেডসহ অন্যান্য কারখানাতে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক, স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্পা লের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও শিল্প পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, জামগড়া, জিরাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসে। পরে অসন্তোষের মুখে কিছু কারখানায় ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিকে গতকাল রোববার রাতে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের পোশাক কারখানার শ্রমিক, স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে।
ইউফোরিয়া গার্মেন্টসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, গত কয়েক দিন ধরে টিফিন বিল ও রাত্রিকালীন অতিরিক্ত ডিউটির টাকা বৃদ্ধি, ছুটি বাড়ানোসহ নানা দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। গত পরশুদিন মিটিংয়ের সময় আমাদের এক সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে মারধর করে কারখানার স্টাফরা। এছাড়া প্রতি মাসের ৭ তারিখ আমাদের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা করছে না মালিকপক্ষ। এসবের দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই কারখানার ভিতরে কর্মবিরতি পালন করছিল শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধ করলে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ দাবি না মানায় শ্রমিকরা ভিতরেই অবস্থান করছিলেন।
এসময় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কারখানার ভিতরে প্রবেশ করে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। এতে কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে।
র্যাব-৪ সিপিসি ২ সাভার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে তাদের (শ্রমিক) বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বিকেলের দিকে এই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। তখন গার্মেন্টস থেকে তাদের ডিসপাস করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। পরে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে সমর্থ হই।’
‘আজকে গার্মেন্টসে যে দুষ্কৃতিকারীরা ছিল, তারা র্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে। পরে আমরা আগুন নেভাতে সমর্থ হই। এসময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন, তবে এটা মেজর না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে অরাজকতার সৃষ্টিকারীদের সনাক্তে আমাদের ছায়াতদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছি, কারা এর পিছনে মদদদাতা এবং গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিবো। এই গার্মেন্টস সেক্টরকে সচল রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।’