বান্দরবানের আলীকদমে ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুই বছরেও শেষ হয়নি আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ। এতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া নির্মাণের উপকরণ বিদ্যালয়ের আশপাশে ছড়িয়ে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) তথ্য বলছে, আলীকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে একটি ছয় তলা নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভবনটি নির্মাণের জন্য ৫ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ৯৭ হাজার ৮ শত ৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের রয়েল এসোসিয়েট এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দেড় বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের কাজ ৩ বছরে শেষ হয়নি এখনও অনেক কিছু কাজ বাকি আছে। ইতি মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৪ কোটি টাকা উপরে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের সময় বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনশেড ভবন ভেঙে ফেলা হয়। ঠিকাদারকে একাধিকবার চাপ দিয়েও ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। নি¤œ মানের কংক্রিটের ঢালাই দেওয়ার পর পাটের বস্তা দিয়ে ঢেকে ভেজানোর কথা থাকলেও তা করেননি ঠিকাদার। ভবনে পর্যাপ্ত পরিমাণে কিউরিং করার কথা থাকলেও তা করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকেই ঠিকাদার বিরতি দিয়ে কাজ করছেন। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবন নির্মাণকাজ দেরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেখে একাধিকবার নির্মাণকাজ শেষ করার অনুরোধ করেছি কিন্তু তাতেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য বারবার অনুরোধ করছি। বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশলীসহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ এর কোন কাগজ পত্র আমার কাছে নেই। এইটা সম্পূর্ণ দেখা শুনা করেন শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবান ইউনিট এবং তারা নতুন ভবন নির্মাণ এর বিষয়ে আমাকে অবগত করেনি বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, ভবন নির্মাণ কাজে যে সিমেন্ট গুলো দেওয়ার কথা সে গুলো না দিয়ে ঠিকাদার রাজ মিস্তিরি সিমেন্ট ব্যবহার করছে। এতবড় ভবনে এই সিমেন্ট ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই বলে জানান। বান্দরবান জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, এটি তিন হাজার স্কুল প্রকল্পের অধীনের একটি বিদ্যালয়। অনেক দিন আগে টেন্ডার হয়েছে। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত করেছে ঠিকাদার। ঠিকাদার ধীরগতিতে কাজ করায় আমরা চিঠি দিয়েছি। চুক্তি ভঙ্গ করে আবার টেন্ডার করলে সময় আরও বেশি লাগবে। সেটা না করে ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকৌশলীরা নিয়মিত কাজ দেখতে যান। আমরা মনিটরিং করি। ভবন নির্মাণ শেষে আমরা ঠিকাদার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিল ফাইনাল করব। প্রথম দিকে টাকার সংকটের কারণে কাজ ধীর গতিতে হয়েছে। একাধিকবার দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদার গাফিলতি করলে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।