শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন

বিএনপি নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল: মেজর হাফিজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, ‘আজকে কারো কারো মনে হতে পারে যে বোধহয় ছাত্ররাই শুধু জুলাই-আগস্টের এই বিপ্লব করেছে। এই বিপ্লবের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করেছে বিএনপির সারাদেশের সাহসি সৈনিকেরা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় গণতন্ত্র শোভাযাত্রার উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছর আমরা লড়াই করেছি। কল্পনা করে দেখুন প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আমরা যে সভা করেছি। নদী সাতরিয়ে মানুষ এসেছে। হাজারো বাধা বিঘœ অতিক্রম করে উম্মুক্ত তরঙ্গের মতো সাগরের ঢেউয়ের মতো গর্জন করে বাংলাদেশে বীর বিএনপির সৈনিকরা সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে গণতন্ত্র মুক্তির জন্য কাজ করেছে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামুর সভাপতিতে সমাবেশে রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মহানগর সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজুর নবী ডন, জেলা সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় হাফিজ বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদ আজ সারা বিশ্বব্যাপী বিপ্লবের প্রতিক। যে মর্যাদা ফিদেল ক্রাস্টো চেয়েগুয়েভারার, সেই একই মর্যাদা উচ্চারিত হচ্ছে রংপুরের কৃতি সন্তান আবু সাঈদের নামে। আমি তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ ও অভিবাদন জানাই।‘হাফিজ বলেন, ‘আমরা এতোদিন বইতে পড়েছি বিপ্লবের কথা। শুনেছি ফ্রিদেল ক্রাস্টো, চে গুয়েবেরাসহ অনেক বিপ্লবীদের কথা। বিপ্লব হয়েছে রাশিয়াতে, ভিতেনামে, আলজেলিয়াতে পৃথিবীর বহুদেশে। আমরা ভাগ্যবান আমরা চোখের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র এবং বিএনপি সৈনিকদের মিলিত প্রচেষ্টায় একটি যুগান্তকারী বিপ্লব দেখতে পেরেছি। এই বিপ্লবের ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকমানুষ কল্পনা করেই নাই জুলাই মাসের বিপ্লবে এই ফাসিস্ট সরকারকে এভাবে পলায়ন করে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু আল্লাহর রহমাতে বিপ্লবী ছাত্র জনতার রক্তদানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের রক্ত করবী ফুটেজে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনা পলায়ন করেছে। গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে।’ বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে এসেছে। বহু তরুণ জীবন দিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে ৬০ লাখ মামলা। এখানে আমরা যারা আছি সবাই বারবার জেলে গিয়েছি। নির্যাতিত হয়েছি। গুম হয়েছে আমাদের অনেক প্রিয় নেতা। সব শেষে জুলাই আগস্ট বিপ্লবে বিএনপির ৪২২ জন অকুতভয় সৈনিক জীবন দিয়ে গণতন্ত্রের পথকে কুসমাস্তির্ণ করেছে। ১৯৭১ সালে যশোর ক্যান্টনেমেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে সিলেট জেলা দখলে নেতৃত্ব দেয়ার স্মৃতি আওড়িয়ে মেজর অব. হাফিজ বলেন, ‘সেদিন ছিলাম আমরা সশস্ত্র। আমাদের কাছে ছিল মেশিন গান, রাইফেল। কিন্তু এবার জুলাই আগস্টের বিপ্লবে যারা মাঠে ছিল, তার ছিল নিরস্ত্র। নিরস্ত্র তরুণদের এই সাহস সারা বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছে। আজকের আধুনিক বিশ্বের মানুষ সেটা কল্পনাও করতে পারে না। হেলিকপ্টার থেকে এই ফাসিস্ট বাহিনী ৩২ জন শিশুকে হত্যা করেছে। এদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা, বিএনপির সৈনিকরা, ঢাকা শহরে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন বিষর্জন দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।’
রংপুরের ১২ জন সৈনিক গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটাধিকার অর্জনের জন্য এই বিপ্লবে জীবন দেয়ার কথা উল্লেখ করে হাফিজ বলেন, ‘আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নাই। আমরা অনেক পথ অতিক্রম করেছি। এই বিপ্লব সফল হবে যখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে। যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা ১৭ বছর ধরে যুদ্ধ করেছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পর আবারো বাংলাদেশের মাটিতে গণতন্ত্র আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে।’ অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে তিনি দ্রুত নির্বাচন কমিশন পূনঃগঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর দাবি জানান মেজর অব: হাফিজ। এই সমাবেশে রংপুর বিভাগ থেকে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেন। পরে পাসপোর্ট অফিস হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, ডিসির মোড়, কাচারী বাজার, সিটি কর্পোরেশন, পায়রা চত্বর জাহাজ কম্পানি মোড় প্রেসক্লাব, জীবন বীমা মোড়, গ্রান্ড হোটেল মোড় হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। মিছিল যখন শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয় তখনো মিছিলের শেষ মাথা পড়েছিল কালেক্টরে ঈদগাহ মাঠে। মিছিলের সম্মুখভাবে ছিলেন জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত হাত পা চোখ হারানো বিপ্লবীরা। তারা হুইল চেয়ারে বসে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। সমাবেশে একজন শহীদের বাবা বক্তব্য রাখেন। গণ শোভাযাত্রার কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা নগরীর প্রধান সড়ক ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত। মানুষ আর মানুষের নগরী হয়ে উঠেছিল রংপুর। নগরীতে তৈরি হয়েছিল বিশাল যানজট। নগরীর সবগুলো সড়কে দেখা যায় বিএনপি নেতা কর্মীদের। সবাই মুক্তভাবে বাঁধাহীন হয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com