আগামী ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী ৪ কোটিরও বেশি মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে মারা যেতে পারে। দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করলেও ভ্রূক্ষেপ করেনি কেউ। পছন্দের বড়ি নিরাপদ মনে করে যখন তখন খেয়ে ফেলার এই অভ্যাসই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দিনের পর দিন।
যে অ্যান্টিবায়োটিকের রোগ সারানোর কথা ছিল, তা-ই ক্রমশ প্রতিরোধী করে তুলছে শরীরকে। আর এর জন্যই এক শ্রেণির জীবাণু ক্রমশই অপরাজেয় হয়ে উঠছে। অ্যান্টিবায়োটিক আর তাদের বধ করতে পারছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’।
গ্লোবাল রিসার্চ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (জিআরএএম) প্রজেক্টের এই বিস্তৃত বিশ্লেষণটি ১৯৯০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রবণতাগুলোর প্রথম গভীর পরীক্ষাকে চিহ্নিত করে, যা আগামী দশকগুলোর জন্য একটি উদ্বেগজনক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
এএমআর ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য প্যাথোজেনগুলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল চিকিৎসার প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে স্বীকৃত। এটি আগামী দশকগুলোতে তীব্রতর হবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডোমিওলজিস্ট জোসেফ লিওনার্দ বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের কোথায় এনে ফেলেছি এটা আমাদের বুঝতে হবে।’ দ্য ল্যানসেটে-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই কারণে। আগামী সময়ে এর হার আরও বাড়বে। ২০২৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে তা বার্ষিক ২০৪টি দেশের ২০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৩ কোটি ৯০ লাখের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটি একটি ভয়ানক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত ব্যবহার, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো, নিয়ন্ত্রণ, উন্নত চিকিৎসার বিকল্পগুলোতে সীমিত অ্যাক্সেস ও দুর্বল স্যানিটেশনের মতো কারণগুলোর কারণে এএমআর-এর প্রাদুর্ভাব সম্ভবত বেশি থাকবে। এএমআর-এর সঙ্গে এই অঞ্চলের লড়াই বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় উচ্চ বয়সের মৃত্যুর হারে প্রতিফলিত হয়। গবেষণার তথ্য প্রকাশ করে যে দক্ষিণ এশিয়া সাব-সাহারান আফ্রিকার পাশাপাশি এএমআর-সম্পর্কিত মৃত্যুর সর্বোচ্চ হারে ভুগছে, যা প্রতিরোধী সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব এবং গুরুতর রোগের ফ্রিকোয়েন্সি উভয়ের কারণেই চালিত হয়। সূত্র: নেচার