চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাটের একটি বেসরকারি হসপিটালে ভুল অস্ত্রোপচারে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাড়ে আট লাখ টাকায় রফাদফার খবর পাওয়া গেছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সচেতন মহলের অনেকে। জানা গেছে, সম্প্রতি বেসরকারি হাসপাতাল ‘সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটাল কর্তৃপক্ষ নিহত প্রসূতি রোকসানা আক্তার মুন্নির স্বজনদের সাথে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ সাড়ে ৮ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের নিকট নগদ ৭ লাখ টাকা ও মেডিকেল খরচ বাবদ দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে হাসপাতালের বিরুদ্ধে দেয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট স্বজনদের অভিযোগটিও কৌশলে প্রত্যাহার করে নেন বলে প্রসূতির স্বজনদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ খবরে ফটিকছড়ির সচেতন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ তুলে নেয়া ও মামলার আশ্রয় না নিতে প্রসূতি মুন্নির পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে থাকে। স্বামীহারা নিহত মুন্নীর স্বজনরা নিরুপায় হয়ে কোন মামলা না করে তার ৪ সন্তানের ভরণ-পোষণ স্বরুপ টাকাগুলো গ্রহণ করেছে। নিহতের স্বজন মোঃ সোহাইল বলেন, মামলা চালানোর মতো অবস্থা ওই পরিবারের নেই। মুন্নীর ৪ সন্তান নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন তার পরিবার।
৪সন্তানের কথা ভেবে সাড়ে ৮লাখ টাকার একটা রফাদফা হয়। ফটিকছড়ি প্রাইভেট হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আলী বলেন-আমার জেনেছি ওই হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডাক্তার সোলাইমান ভুল অপারেশন করে প্রসূতিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনি ওই হসপিটালের মাধ্যমে রোগীদের সাথে একধরনের প্রতারণা করে যাচ্ছে। আমরা এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। রাঙ্গামাটিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আক্ষেপের সাথে জানান, বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে যদি ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে একটি জীবন বিপন্ন হয়। আর সেই মৃত্যু যদি টাকার মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়া হয়। এসব ভাবতেই খারাপ লাগে। তবে, ভবিষ্যতে ওইসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলোতে অনিয়ম- অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সোলাইমান বলেন-রফাদফার বিষয়টি সত্য নই। হসপিটালে রোগীর মৃত্যু হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিমকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ডা. আরেফিন আজিম বলেন, ঘটনা তদন্ত করে যেসকল তথ্য পেয়েছি তা সিভিল সার্জনের কাছে প্রতিবেদন আকারে জমা দিয়েছি। আশাকরি তিনি ব্যবস্থা নিবেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আপোষ ও অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়টিকে দু:খজনক উল্লেখ করে ভূল চিকিৎসার ব্যাপারে কোন ছাড় নেই বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত ১সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রসূতি মুন্নী(৩৩)। এর আগে, প্রসব ব্যথা ওঠায় ২৪ আগস্ট সন্তান প্রসবের জন্য নাজিরহাটস্থ সেন্ট্রালপার্ক হসপিটালে ভর্তি হয় সে। একই দিন মুন্নি আক্তারকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করান ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. সোলাইমান। প্রসবের দুই দিন পর ২৭ আগস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ভর্তির ৪ দিন পর হাসপাতালে মৃত্যুর হয় মুন্নীর। সে ফটিকছড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড জামান চৌধুরী বাড়ীর মৃত ফোরকান আহমেদের স্ত্রী।