তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বেলায়েত হোসেনকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় যে ক’জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী নিরীহ ছাত্রদের উপর জুলুম নির্যাতন আর নির্মম হত্যাকা- চালিয়েছে বেলায়েত হোসেন তাদের অন্যতম একজন। সম্মিলিত ছাত্রÑজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে অনেকের মতোই গা ঢাকা দেন বেলায়েত হোসেন। এতদিন নিজেকে লোক চক্ষুর অন্তরালে রাখতে পারলেও শেষ রক্ষা হলো না। গত শনিবার সেনাবাহিনীর অভিযানে তুরাগের দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মেট্রোরেল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। দিয়াবাড়ি সেনা ক্যাম্পের মেজর আরিফ নাশাদ আনান গণমাধ্যমকে জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে বেলায়েত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যা মামলা রয়েছে’। মেজর আরিফ নাশাদ আনান আরও জানান ‘ গ্রেফতারের পর বেলায়েত হোসেনকে উত্তরা পূর্বÑথানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
তথ্য মতে, গত ২৬ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় খলিল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীদের একজন ছিলেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী বেলায়েত
হোসেন। এ নিয়ে গত শনিবার উত্তরা পূর্ব থানার উপÑপরিদর্শক ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ‘গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আজমপুর এলাকায় অংশ নিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান (২৬) নামের এক ছাত্র। পরে বিকেলের দিকে তিনি আন্দোলন প্রতিহতকারীদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন। পরে তার মামা খলিল আহমেদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামী বেলায়েতকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।’ সবশেষ এই সংবাদটি লেখা পর্যন্ত উত্তরা পূর্ব থানার উপÑপরিদর্শক ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান দৈনিক খবরপত্রকে জানান, নিয়মানুযায়ী আমরা আসামীকে কোর্টে তুলেছি। অপরাধী অবশ্যই শাস্তি পাবে। অভিযোগের অন্ত নেই বেলায়েতের বিরুদ্ধে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেলায়েত হোসেনের বসতবাড়ি তুরাগ থানাধীন শুক্কুর ভাঙ্গা এলাকায় হলেও বেশ কিছুদিন থেকে তিনি দিয়াবাড়ির নিমতলীর টেক এলাকায় থাকেন। ওই এলাকায় রয়েছে বেলায়েতের শ্বশুর বাড়ি। গত শনিবার সেনাবাহিনীর অভিযানে বেলায়েত হোসেন গ্রেফতার হলে স্থানীয় জনমনে নেমে আসে স্বস্তির ছায়া। শুক্কুর ভাঙ্গা এবং নিমতলীর টেক এলাকা ঘুরে স্থানীয় বেশ ক’জন বাসিন্দার সাথে কথা হয়। অনেকেই ভয়ে কথা বলতে না চাইলেও কেউ কেউ নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। জানান, দীর্ঘদিন এলাকার দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারসহ সকল ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত বেলায়েত হোসেন। কেউ এসবের প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসতো ভয়াবহ নির্যাতনের খড়ক। নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আরেকজন বাসিন্দা জানান, শুক্কুর ভাঙ্গা এলাকায় তার একটি জমি আছে। কিছুদিন আগেই জমিটি দখলে নেয় বেলায়েত হোসেন গংরা। অনেক আকুতি মিনতি আর দেন দরবার করেও শেষ পর্যন্ত সুরাহা করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বিধায় শত অন্যায় করলেও কেউ বেলায়েত হোসেনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা নালিশ জানাতে নারাজ থাকতো। বেলায়েত হোসেনের গ্রেফতারের খবরে ভুক্তভোগীদের মনে ফিরে এসেছে স্বস্তি। ভুক্তভোগীরা আশা করেন, এবার বেলায়েত হোসেন তার সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য যথাযথ শাস্তি ভোগ করবেন।