মহান আল্লাহ মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। সাধারণভাবে এ সম্মানের বিষয়টি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই প্রযোজ্য। এতে কোনো তারতম্য করা হয়নি। কেননা, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই হজরত আদম আলাইহিস সালামের সন্তান। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন- ‘আর আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদেরকে স্থলে ও সাগরে চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিজিক। আর যা সৃষ্টি করেছি, তাদের থেকে অনেকের ওপর আমি তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৭০)।
আদম সন্তানের এ সম্মানের বিষয়টি ব্যাপক তথা সব মানুষই এর আওতাভুক্ত। মহান আল্লাহ নিজের অনুগ্রহের ছায়া মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্যই বিস্তৃত করেন। তাই তিনি জলে-স্থলে বাহনও ও রিজিক দান করেন, সব মানুষকেই পৃথিবীর সব কিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ইসলামের এ দৃষ্টিভঙ্গি সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ইসলামী শরিয়তে সর্বক্ষেত্রেই মানবজাতির প্রতি এ সম্মান রয়েছে। শুধু তাই নয়, নবীজী সা:-এর সব কথা এবং কাজেই এ দৃষ্টিভঙ্গিটির প্রতিফলন ঘটেছে। সব শ্রেণীর মানুষের প্রতি মহানবী সা:-এর আচরণ ছিল সম্মানসূচক। কোনো মানুষকে অন্যায়ভাবে অপদস্ত করা কিংবা কারো প্রতি অত্যাচার করা অথবা কাউকে তার অধিকার থেকে বি ত করা এবং তার মর্যাদাহানি করা তাঁর স্বভাবে ছিল না। অমুসলিমদের সাথে তিনি মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক সুন্দর আচরণ করতেন। হাদিসে এমন অসংখ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আসমা বিনতে আবু বকর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, যখন কুরাইশদের রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলো, তখন আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন। আমি আল্লাহর রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন এবং তিনি মুখাপেক্ষী, আমি কি তার সাথে সদাচরণ করব? মহানবী সা: বললেন, ‘হ্যাঁ, তার সাথে উত্তম আচরণ করবে’ (বুখারি-২৪৭৭)।
যে সব অমুসলিম-কাফের রাসূলুল্লাহ সা:-এর বিরোধিতায় তরবারি উন্মুক্ত করেছিলেন, তাদের প্রতিও তিনি উদারতার প্রমাণ রেখেছেন। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ‘নাখল’ নামক স্থানে খাসফার যুদ্ধে ছিলেন। এমন সময় মুসলিমদের অসতর্কতায় হঠাৎ গাওরাস ইবনুল হারিস নামক এক ব্যক্তি তরবারি হাতে রাসূলুল্লাহ সা:-এর মাথার কাছে এসে দাঁড়াল এবং বলল, কে এখন আপনাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আল্লাহ’। এ উত্তর শোনার সাথে সাথে তার হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সা: তরবারিটি উঠিয়ে বললেন, এখন কে তোমাকে আমার থেকে রক্ষা করবে? সে বলল, আপনি আমার প্রতি দয়াবান হোন। মহানবী সা: বললেন, ‘তুমি কি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই’ সে বলল, না, কিন্তু আমি আপনার সাথে অঙ্গীকার করছি যে, আমি আপনার সাথে আর যুদ্ধে লিপ্ত হবো না এবং যারা আপনার সাথে যুদ্ধ করে তাদের অন্তর্ভুক্তও হবো না। তখন রাসূলুল্লাহ সা: তাকে ছেড়ে দিলেন। তার পর সে তার সঙ্গীদের কাছে গিয়ে বলল, আমি এখন পৃথিবীর সর্বোত্তম ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছি’ (বুখারি-৩৯০৫)।
লক্ষণীয় বিষয় হলো- বিশ্বমানবতার দূত হজরত মুহাম্মদ সা: সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লোকটিকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেননি। তার থেকে প্রতিশোধও গ্রহণ করেননি। মূলত ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিরপরাধ ব্যক্তিদের সাথে সহনশীল মানবতাসুলভ আচরণেরই নির্দেশ দিয়ে থাকে। সেটি মানবতার মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ সা:-ই আমাদের শিখিয়ে গেছেন। লেখক : অফিস সহকারী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ