নীল রং ও শুভ্র মেঘে সাজানো শরতের আকাশের নিচে হাওয়ায় দুলছে লাউ, চালকুমড়া, শসাসহ নানান জাতের শাকসবজির লতাপাতা। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, কোনো সবুজ গালিচা। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের কাশোরারচর বিলের ওপর বিষমুক্ত শাকসবজির এ বাগান চোখ জুড়িয়ে দেয়। ১০ একর বিলের অর্ধেকের বেশি অংশে কৃষকরা তৈরি করেছেন ২০০টি বেড। তাদের কেউ নৌকা নিয়ে, কেউ পানিতে নেমে বাগান পরিচর্যা করেন। আর এভাবে সবজি চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক। জানা গেছে, ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা ফসল চাষ, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস এ বছর মহিনন্দ ও কলাপাড়া ব্লকে ৫০টি প্রদর্শনী করছে। এর মধ্যে ১০টি প্রদর্শনী হবে মসলাজাতীয় ফসলের। কাসুরারচর বিলের কচুরিপানা পচিয়ে লম্বা লম্বা ভাসমান বেড তৈরি করে সেখানে শাকসবজি চাষ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষ করতে বাড়তি কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু জায়গায় বসানো হয়েছে ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’। ভাসমান বেডের শাকসবজি জনস্বা¯ে’্যর জন্য নিরাপদ। তবে দাম কিছুটা বেশি। কাশোরারচর এলাকার কৃষক ফয়েজ উদ্দিন চারজনের দল নিয়ে ৫০টি বেডে শাকসবজি আবাদ করছেন। মফিজ উদ্দিন পাঠান ও রাজীব মিয়া ৫১টি বেডে আবাদ করেছেন।
রুহুল আমিনের রয়েছে ৩৮টি বেড। তারা জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বীজ, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, প্লাস্টিকের নৌকাসহ উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছে। তাদের নিজস্ব জমি নেই। ফলে কৃষি অফিসের সহায়তায় হাজামজা বিলে ভাসমান বেডে শাকসবজির চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। মহিনন্দ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম জেবুন্নেছা জানান, এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে ভাসমান বেডে শাকসবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা আক্তার ফাহিম জানান, এটি সাত মাসের প্রকল্প। বর্তমানে তিন মাস চলছে। এরই মধ্যে আশাতীত ফল পাওয়া যাচ্ছে। জমির শাকসবজি অতিবর্ষণ, বর্ষা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এতে ভাসমান বেডের শাকসবজির কোনো ক্ষতি হয় না। ফলে জমির শাকসবজির যখন আকাল দেখা দেয়, তখন ভাসমান বেড থেকে বাজারে শাকসবজির জোগান পাওয়া যায়।