সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। অপর দুই সাবেক সেনা কর্মকর্তা হলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: আকবর হোসেন ও মেজর জেনারেল (অব.) মো: সারোয়ার হোসেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দায়ের করা এ অভিযোগের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে ব্যারিস্টার এম.সারোয়ার হোসেন। তবে এ বিষয়ে গুমসংক্রান্ত কমিশনের কমিশনার ও কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য মেলেনি।
অভিযোগ দাখিলকারী ব্যারিস্টার এম.সারোয়ার হোসেন সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তাকে স্বৈরাচারের দোসর, গুম-খুনের হোতা, গোপন বন্দিশালা (আয়নাঘর নামে পরিচিতি পাওয়া) সৃষ্টিকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে গুম করার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর বেলা ১১টায় চা পানের কথা বলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে যান। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় সেখানে তাকে গোপন বন্দিশালায় নেয়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়। যদিও ১১ ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি লিখিত অভিযোগে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে না দিলে হয়তো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ হিল আমান আযমী ও ব্যারিস্টার আরমানের মতো অবস্থা হতো।
সারোয়ার হোসেনের ভাষ্য, তিনি ২০ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে ২০০৭ সালে আইনপেশায় নিয়োজিত হন। ২০০৮ সালে থেকে তিনি সুশাসন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছেন। বিশেষ করে দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। অভিযোগে সারোয়ার আরো বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তিনি যেহেতু গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের কথা বলেন এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের সমালোচনা করেন, সে জন্য ওই তিন সেনা কর্মকর্তা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সাবেক সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ এবং ২০২৪ সালে পাতানো নির্বাচনে সহযোগিতা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করার অভিযোগ আনেন এম.সারোয়ার হোসেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে সারোয়ার হোসেন
২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিজিএফআইতে চাকরির সময় অগণিত মানুষকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পাতানো নির্বাচনে সহায়তা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর হওয়ার অভিযোগ এনেছেন। মেজর জেনারেল (অব.) মো: সারোয়ার হোসেনের বিষয়ে ব্যারিস্টার সারোয়ারের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক থাকাকালীন তিনি গুম, খুনসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ সংঘটিত করেছেন। সহযোগিতা করেছেন। তিনিও ছিলেন পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর।