কুড়িগ্রামের উলিপুরে দেড় বছর পর হত্যা মামলার প্রধান আসামি জাহিদ হোসেন(৩৩)কে আটক করে পুলিশে দিলেন নিহতের স্বজনেরা। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ সময় ধরে আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। বুধবার (২ অক্টোবর) উলিপুর পৌর শহর জোদ্দারপাড়াস্থ এলাকা থেকে ওই আসামিকে আটক করেন নিহতের পিতা-মাতা। এ ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে বুধবার সন্ধ্যার দিকে পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। মামলা ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উমানন্দ মিয়াজীপাড়া গ্রামের ফয়জার রহমানের ছেলে সুজন মিয়ার সাথে ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের দাড়ারপাড় এলাকার আব্দুল হামিদের মেয়ে হাবিবা বেগমের(২৩) বিবাহ হয়। বিয়ের প্রায় আট মাস পর হাবিবা বেগম পরীক্ষা দেয়ার কথা বলে পিতার বাড়িতে চলে যান। এসময় স্বামী সুজন ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে যান। ২০২৩ সালে ৬ মার্চ সুজন ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরলে দাড়ারপারস্থ শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে ডেকে নেন। এরপর দুইদিন তাকে আটকিয়ে রেখে শ্বশুর বাড়ির লোকজন নির্মম ভাবে নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় সুজনের পরিবারের লোকজন জানতে পেরে ৭ মার্চ জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশি সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় সুজন মিয়া মুমূর্ষু অবস্থায় থাকায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ মার্চ সুজন মিয়ার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা ফয়জার রহমান বাদী হয়ে নামীয় ৮জন ও অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে প্রধান আসামি জাহিদ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত কারনে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা। এদিকে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে মানববন্ধনে নিহত সুজনের পিতা ফয়জার রহমান অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর থেকে প্রধান আসামি জাহিদ হোসেনসহ এজাহার নামীয় আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত কারনে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেননি। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় থানায় গিয়ে আসামিদের তথ্য দিয়ে গ্রেপ্তারের দাবী জানানো হলেও অজ্ঞাত কারনে পুলিশ নিশ্চুপ ছিল। তারা আরও বলেন, প্রধান আসামি জাহিদ হোসেন উলিপুর পৌরসভায় কার্য সহকারী পদে কর্মরত থাকায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে চাকুরির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বুধবার জাহিদ পৌরসভার জোদ্দারপাড়াস্থ এলাকায় রাস্তার মাপযোগের কাজের তদারকি করার সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তাকে আটক করি। এ সময় তার সাথে থাকা কয়েকজন আমাদের উপর হামলা করে জাহিদকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমরা থানা পুলিশে বার বার ফোন দিলে তারা প্রায় দেড় ঘন্টা পর এসে জাহিদকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিহতের পিতা ও মামলার বাদী ফয়জার রহমান, মাতা হাসিনা বেগম ও স্বজন সোহেল রানা প্রমুখ। বিক্ষোভকারীরা প্রশাসনের জবাবদিহি ও আসামীদের ফাঁসির দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে তৎপর ছিল। বাদী যখনি আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে আমরা তখনি সহযোগিতা করেছি।