সাব্বির হোসেন ঢাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহিদ হন। তিনি ছিলেন তার নি¤œবিত্ত পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা মা এখন অসহায় এবং দিশেহারা।
সাব্বির হোসেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের। এটি একটি ছায়া সুনিবিড় গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আমোদ আলী। তার স্ত্রী রাশিদা খাতুন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে বড় সাব্বির হোসেন (২৩)। দ্বিতীয় সন্তান সুমাইয়া খাতুন স্থানীয় ডিএম কলেজে লেখাপড়া করে। ছোট ছেলে সাদিক হোসেন স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ে।
পিতা আমোদ আলী বাসসকে জানান, সাব্বির লেখাপড়ায় খুব একটা এগুতে পারেনি। স্থানীয় আমেনা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কয়েক বছর পড়ালেখা করে। তারপর ভর্তি হয় স্থানীয় মাদ্রাসায়। সেখানে কোরআনে ১০ পারা হাফেজ হয় সে। পাড়াশোনা এখানেই ইতি। এরপর বাউন্ডুলে জীবন। তবে সাব্বির ছোট বেলা থেকেই পরোপকারি ছিল বলে জানান তিনি।
সাব্বির ছয় কি সাত বছর আগে ঢাকায় যেয়ে টাইলস মিস্ত্রির কজ শুরু করেন। মাঝে মাস দুয়েক বড়ি এসে বসে ছিলেন। এরপর আবার ঢাকায় গিয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে অর্গান লিমিটেড কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন।
সে দিন ছিল ১৮ জুলাই। উত্তরায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র- জনতার সাথে স্বৈরাচারের পেটোয়া বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ, গোলাগুলি চলছিল। তিনিও এই আন্দোলনে শরিক হন। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সাব্বির একটি ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সহযোদ্ধারা তাকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন ১৯ জুলাই ভোরে তার লাশ নিজ গ্রামে পৌঁছে। সাব্বিরের লাশ সকাল ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহের সমন্বয়ক রতœা খাতুন, আনিচুর রহমান জানান, তাদের পক্ষ থেকে এই পরিবারটির নিয়মিত দেখভাল করা হচ্ছে। তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাব্বিরের থাকার ঘরে গিয়ে দেখা গেল আগের মতই বিছানাটি পাতা আছে। আলনায় ঝুলছে তার ব্যবহার করা কাপড়চোপড়। মা রাশিদা খাতুন সারাক্ষণ তার নিহত ছেলের ব্যবহৃত জিনিস-পত্র নাড়াচাড়া আর স্মৃতি নিয়ে আহাজারি করেন। তিনি স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে অশ্রুশিক্ত কন্ঠে জানান, সাব্বিরের মোটরসাইকেল কেনার খুব আগ্রহ ছিল। প্রায়ই কিনে দিতে বলতো। আমি তাকে বুঝিয়ে বলতাম বোনটাকে আগে বিয়ে দাও। কয়টা গরু পুষেছি। ওগুলো বিক্রি করে মেয়ের বিয়ের খরচ মিটিয়ে তারপর তোমার মোটরসাইকেল কিনে দেবো। ঘটনার আগের দিন সন্ধার পর সাব্বির মোবাইল করেছিল। পরিবারের সব ভাল মন্দ খবর নিয়েছিল। বেতন হলে টাকা পাঠাবে বলেছিল। সাব্বিরের বাবার বয়স হয়ে গেছে। তিনি এখন কাজ করতে পারেন না। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সাব্বির সংসারের হাল ধরেছিলেন। সাব্বিরের মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অসহায় ও দিশেহারা।
মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু অর্থের যোগান নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা সাব্বিরের বাবা মায়ের। এছাড়া ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারে আর্থিক চাহিদাও বা কিভাবে মেটাবেন তা নিয়েও চিন্তিত তারা। তাই তারা সরকারের কাছে আর্থিক সহয়াতা চেয়েছেন।
তারা তাদের জীবদ্দশায় সন্তান হত্যার বিচারও দেখে যেতে চান। আর সরকার যেনো তাদের বাড়ির পাশে একটি মসজিদ করে দেয়। যেখানে বসে এলাকাবাসী তাদের ছেলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
এটুকুই চাওয়া সাব্বিরের বাবা মায়ের।