আগামী ৯ অক্টোবর রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপসহ সার্বিক বিষয় জাতির সামনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আপনাদের (মিডিয়া) মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রস্তাবনাগুলো উন্মুক্ত করবো ইনশাল্লাহ। দিনক্ষণ ঠিক থাকলে ওই দিন আমরা আমাদের চিন্তা-ভাবনা জাতির সামনে তুলে ধরবো যে, এই মুহুর্তে কি কি সংস্কার প্রয়োজন, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কীভাবে সংস্কার প্রয়োজন। সরকারের কাছে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শনিবার বিকেলে যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক শেষে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, প্রচার ও মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন। জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। কিন্তু গত সাড়ে ১৫ বছর আপনারা বিবেক অনুযায়ী কাজ করতে পারেননি। বাধ্য করা হয়েছে সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্য, সরকারকে অবৈধ সুবিধা দেয়ার জন্য মিথ্যা বানোয়াট বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশনে বাধ্য করা হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু, আমরা অতীত নিয়ে ঘাটতে চাই না। আমরা দেশবাসীকে সাথে নিয়ে সকলের সহযোগীতায় দেশটা সামনের দিকে আগাক, সেই জায়গাটায় আমরা অবদান রাখতে চাচ্ছি। এজন্য অতীতে যা হয়েছে আমরা তা পেছনে ফেলে দিলাম। তবে, যারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত, যারা মানুষ খুন করেছে, গুম করেছে, লুটপাট করেছে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে, আয়নাঘর তৈরি করেছে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে-তাদের বিচার দাবি করছি। তবে, আমাদের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে, তাদের ওপর সেই জুলুম করা হোক চাই না। আমরা চাই ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সবাই যেন তাদের অপরাধের পাওনাটা বুঝে পায়।
শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আজকে এসেছিলাম দেশ ও জাতির প্রয়োজনে। এই সরকার একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারা দেশ শাসনের জন্য আসেননি। দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মানের জন্য এসেছে। গত পরপর তিনটি নির্বাচনে জাতি যেভাবে বঞ্চিত ছিল, জাতির সামনে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। এজন্য তাদের কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করতেই হবে। কি কি মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন, সেই ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জনগণ ও বর্তমান সরকার পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত হতে পারে এবং সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে আরো ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে-সেই বিষয়গুলো নিয়ে এখানে (বৈঠক) কথাবার্তা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা দেশকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে আমরা আশা করছি যে, এই সময়টা না দীর্ঘ হবে। শুরু থেকেই আমরা বলে আসছিলাম, সংস্কারের জন্য সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে-এ নিয়ে অচিরেই আমরা কাজ করবো এবং সেটাও আপনাদের সামনে চলে আসবে।আশা করছি খুব দেরি হবে না।
জামায়াত আমির বলেন, আগামী দিনে বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করছি। যেখানে কোনো দল বা ধর্মের কারণে কেউ জুলুমের শিকার হবে না। ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।
আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সরকারের সাথে জনগণের পার্টনারশিপ লাগবে, তাদের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জনগণ যদি এক সাথে কাজ করে তাহলে আশা করছি হিন্দু ভাই-বোনেরা সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারবে।
কী কী সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হলো বৈঠকে জানতে চাইলে জামায়াত আমির বলেন, এ ব্যাপারে আমরা মুখ খুলবো আগামী ৯ অক্টোবর। সেই পর্যন্ত আপনারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে দু’টি রোডম্যাপ চেয়েছি। একটি নির্বাচনী আরেকটি সংস্কারের রোডম্যাপ। সংস্কারটা সফল হলে নির্বাচনটা সফল হবে। এজন্য দু’টি বিষয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের সাথে আমাদের আরো ডায়লগ হবে এবং অচিরেই এ বিষয়টি তারাও প্রকাশ করবেন আমরাও প্রকাশ করবো। এটা খুব দেরি হবে না আশা করছি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকারকে বলেছি, আপনাদের প্রতি জনগণের অনেক বেশি প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশার সময়টা টেনে আপনারা লম্ব করবেন না। যৌক্তিক সময়ের সম্মানটা রক্ষা করবেন। উনারা দ্বিমত পোষণ করেন নাই। আশা করি এখানে কোনো সঙ্কট তৈরি হবে না।