চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার এক সময়ের রাজমিস্ত্রির কাজ করা মোঃ বেলালের বিরুদ্ধে মসজিদের নামে চাঁদা আদায় করে সেই টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের বাইতুল মা,মুর জামে মসজিদের নির্মাণকাজের জন্য আবু ইউসুফের বাবা মোবারক ইউসুফ নামের এক কুয়েতী নাগরিকের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার কুয়েতি দিনার, বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা এনে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে সেই টাকা দিয়ে নিজে ৫তলা পাকা দালানের ফাউন্ডেশন দিয়ে ২ তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে হারুন ড্রাইভারের ছেলে অভিযুক্ত বেলাল। এছাড়াও মসজিদ সংলগ্ন দাঁতমারা তাদলিমুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসা, হেফজখানা ও এতিমখানার ছাত্রদের জন্য কুয়েতি ঐ নাগরিকের কাছ থেকে প্রতিমাসে দেয়া ১২০ দিনার, বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে নিলেও তার একটি টাকাও এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়নি। যার সম্পূর্ণ টাকায় আত্মসাৎ করে ওই বেলাল। সরজমিনে দেখা যায়, দাঁতমারা ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরপাশ্বে সড়কের পাশ্বে পাকা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন এক সময়ের রাজমিস্ত্রি বেলাল। বেলালের মামা কুয়েত প্রবাসী করিম জানান, বেলালকে আমি ভিসা দিয়ে কুয়েতে নিয়ে আসি। বেলাল চাকরীর সুবাধে মোবারক ইউসুফ নামে কুয়েতি ঐ নাগরিকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। পরে ওই নাগরিকের কাছ থেকে মসজিদ নির্মাণ করার কথা বলে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার দিনার নেয়। এছাড়াও এতিমখানার জন্য প্রতি মাসে ১২০ দিনার করে দেয় ওই কুয়েতি। কিন্তু পরে জানতে পারলাম বেলাল ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার মত মসজিদে ব্যয় করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করে। সে নিজের পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলা ঘর সম্পন্ন করেছে, গাড়ি ও জায়গা কিনেছে। তিনি জানান এসবের জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশিদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এসব আত্মসাৎকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত। এদিকে মোবারক ইউসুফের ছেলে আবু ইউসুফ মুঠোফোনে জানান, বেলাল তার বাবার কাছ থেকে মসজিদ নির্মাণের কথা বলে সাড়ে ১৪ হাজার দিনার এবং এতিমখানার জন্য প্রতি মাসে ১২০ দিনার করে নেয়। কিন্তু পরে জানতে পারলাম সে ওই টাকা মসজিদ ও এতিমখানায় না দিয়ে আত্মসাৎ করে বাড়ি, জায়গাও গাড়ি কিনেছে। এদিকে, মসজিদের জন্য কুয়েতের কাছ থেকে নিয়ে আসা টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে মসজিদের মতোয়াল্লি ইসহাক ডিলার জানান, বেলালের কাছ থেকে আমরা কোন টাকা নেইনি। মসজিদের জানালা এবং অন্যান্য খাতে সেই সাড়ে চার লক্ষ টাকার মত ব্যয় করেছে। এছাড়া এতিমখানার প্রতি মাসের টাকার ব্যাপারে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি এই ঘটনার সাথে যে বা যারাই জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান। এদিকে মসজিদে ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা শফিউল আলম জানান, বেলাল বিদেশ যাওয়ার আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। এখন অনেক টাকা খরচ করে নিজে বাড়ী করেছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য দেয়া ৬০ লক্ষ টাকার ব্যাপারে আমি কিছুদিন আগে ইসহাক ডিলারের কাছ থেকে শুনেছি। তিনি জানান, মসজিদের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা আমরা পাইনি। বেলাল দরজা জানালার কাজ করে দিয়েছে যার মূল্য ৪ থেকে ৫লাখ টাকার মত হতে পারে। এছাড়া এতিমদের খরচের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। আমি এক টাকাও এতিমদের জন্য বেলালের কাছ থেকে পাইনি। বেলাল যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে সত্য প্রমাণিত হলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত বেলালের বাড়ীতে গেলে তিনি ঘর থেকে পালিয়ে যান। পরে পালানোর বিষয়টি স্বীকার করে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, আমি জামাআত ইসলামীর রাজনীতি করি বলে প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি লোন নিয়ে বাড়ী করেছি, এখনো লোন চলছে আমার। তবে বেলাল এসবের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করবেন বলে আর দেখা করেনি। জানতে চাইলে ভূজপুর থানা জামায়াত ইসলামীর আমির সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ আল কাদেরী জানান, বেলাল নামক কাউকে তিনি চিনেন না। পরে খোঁজ নিয়ে জানাবেন বললেও ফোন রিসিভ করেননি।