সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কলমাকান্দা-বরুয়াকোনার সড়কে খানাখন্দ, জনদুর্ভোগ চরমে উৎসব মুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুগোৎসব পালন হয়েছে-ইঞ্জিনিয়ার আকরাম হোসেন তালিম সোসাল মিডিয়ায় ইসলাম নিয়ে কটুক্তির জেরে নাজিরপুরের ০২ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার গলাচিপা উপজেলা প্রশাসনে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবসে রেলি আলোচনা সভা সংষ্কার করতে এসেছি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে নয়-দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম কমলগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব সম্পন্ন মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিষ্টার জহরত আদিব চৌধুরী সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়ায় দুই বাংলার মিলন মেলা জমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বিজয়নগরে মহিলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি ইয়াবাসহ স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

ইসলামে মানুষের সম্মানের নিরাপত্তা

ইসলাম ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

ইসলামে মানুষের জীবন ও সম্পদ যেমন সম্মানিত, নিরাপত্তা পাওয়ার হকদার, মানুষের মর্যাদাও সম্মানিত ও নিরাপত্তা পাওয়ার হকদার। সাহাবিদের উদ্দেশে দেওয়া একটি ভাষণে নবিজি (সা.) মানুষের জীবন ও সম্পদের পাশাপাশি সম্মানের নিরাপত্তার কথাও গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরবানির দিন সবাইকে সমবেত করে একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন দিন? সকলেই বলেন, সম্মানিত দিন। তিনি বলেন, এ শহরটি কোন শহর? তারা বলেন, সম্মানিত শহর। তিনি বলেন, এ মাসটি কোন মাস? তারা বলেন, সম্মানিত মাস। তিনি বলেন, আপনাদের রক্ত, আপনাদের সম্পদ, আপনাদের সম্মান আপনাদের জন্য তেমনই সম্মানিত, যেমন সম্মানিত আপনাদের এ দিনটি, আপনাদের এ শহর এবং আপনাদের এ মাস। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। (সহিহ বুখারি: ১৭৩৯)
ইসলামে মানুষের মর্যাদা রক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষের সম্মান নষ্ট করে এমন কাজগুলোকে হারাম ও বড় গুনাহ ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন অপবাদ, গালি, গিবত ইত্যাদি কবিরা গুনাহ গণ্য হয়। মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা উপহাস করা, মন্দ নামে ডাকা ইত্যাদিও কবিরা গুনাহ। কোরআনে এ সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোন নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। (সুরা হুজরাত : ১১)।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এই নিন্দনীয় স্বভাবের উৎস বা মূল কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন সেটা হলো অহংকার। নিজেকে অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করা, অন্যদের হীন, তুচ্ছ ও ছোট মনে করার মানসিকতা থেকেই মানুষ ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ করে। অথচ সে জানে না আল্লাহর কাছে তার অবস্থান কী। হতে পারে যাকে সে তুচ্ছ ভাবছে আল্লাহর কাছে সে-ই বেশি সম্মানিত। আল্লাহর কাছে কে উত্তম, আর কে নিকৃষ্ট এটা শুধু আল্লাহই জানেন। তাই অন্যকে তুচ্ছ আর নিজেকে সম্মানিত ভাবার মানসিকতা অর্থাৎ অহংকার ত্যাগ করতে হবে।
হাদিসে আল্লাহর রাসুলের (সা.) বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট হয়, অন্যকে তুচ্ছ মনে করাই হলো অহংকার আর যার অন্তরে অংহকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (এটা কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?) নবিজি (সা.) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা। (সহিহ মুসলিম: ২৭৫)
সম্মান নষ্ট করার জন্য মানুষের পেছনে লেগে থাকা, কুধারণা ও গিবতও বড় গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অহেতুক কুধারণা, অন্যের পেছনে গোয়েন্দাগিরি ও গিবত করতে নিষেধ করে বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান গুনাহের কাজ। আর তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু। (সুরা হুজুরাত: ১২)
মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কর, মানুষের পেছনে লেগে থাকা, পেছনে সমালোচনা করা, কুধারণা করা ও তা চর্চা করা ইত্যাদি সবগুলো কাজই বান্দার হকের সাথে সংশ্লিষ্ট ও জুলুম। আল্লাহ তাআলা এ সব জুলুম ক্ষমা করবেন না। এ সব অপরাধের জন্য কেয়ামতের দিন অনেক নেক আমল করা মানুষও নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
হাদিসে এসেছে, একদিন রাসুল সা. সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি বলতে পার, নিঃস্ব বা দেউলিয়া কে? সাহাবিরা বললেন, যার টাকা কড়ি ও ধন-সম্পদ নেই, আমরা তো তাকেই নিঃস্ব মনে করি। রাসুল সা. বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সেই প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এই অবস্থায় আসবে যে, কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভোগ করেছে, কাউকে পিটিয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে। তার কথা ও কাজের কারণে যারা নির্যাতিত হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার থেকে নেক আমল দেয়া হবে, তার নেক আমল শেষ হয়ে গেলে তাদের পাপের একাংশ তার ওপর চাপানো হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ মুসলিম: ২৫৮১)
তাই খুব সাবধান থাকা উচিত যেন এ রকম কোনো কাজে আমরা জড়িত না হয়ে পড়ি। অন্যের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের কোনো ক্ষতি যেন আমাদের দ্বারা না হয়। আল্লাহ আমাদের তওফিক দিন!




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com