শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন

জাতীয় মুফাসসির সম্মেলন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কৃতিত্ব কাউকে দাবি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এর সব কৃতিত্ব আল্লাহর…। আমরা কেউ যেন ক্রেডিট দাবি না করি যে এটা ওলামায়ে কেরাম করছে, এটা ছাত্রশিবির, এটা জামায়াতে ইসলামী, এটা বিএনপি বা অমুক দল করেছে-এ ধরনের কথা বলা সংগত হবে না।’ গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় মুফাসসির (যিনি পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা করেন) সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান শফিকুর রহমান। এর আগে মুফাসসিরদের অনেকে ৫ আগস্টের পরিবর্তনে আলেম সমাজের অবদানের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দেন। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি যদি জিজ্ঞাসা করি, আগস্ট মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত কেউ কি চিন্তা করেছিলেন, এমন একটা ঘটনা ৫ তারিখে ঘটবে। দুনিয়ার কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী চিন্তা করেছিলেন? যারা আমাদের দেশে ষড়যন্ত্রের জাল সৃষ্টি করেছিল, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থান নিয়েছিল, তারাও কি টের পেয়েছিল, পায়নি। আল্লাহ তাঁর কল্পনা এবং বিপরীত সব অপচেষ্টা-অপকৌশলকে একদিকে রেখে তাঁরই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করেছেন। অতএব আমরা যেন কেউ ক্রেডিট দাবি না করি। সব কৃতিত্ব আল্লাহর।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এটা (পরিবর্তন) আমাদের চেষ্টার ফসল নয়। চেষ্টা যদি কিছু থাকে, সেটাও আল্লাহর দান। আমরা তো সাড়ে ১৩ বছরে দফায় দফায় চেষ্টা করেছি, রক্ত দিয়ে চেষ্টা করেছি, তাদের সঙ্গে সামনে নেমে লড়াই করে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফলতা তো আমাদের হাতে ধরা দেয়নি। এর থেকে প্রমাণিত হয়, শুধু আমাদের চেষ্টায় হবে না, আল্লাহর দরবারে যখন যার যার চেষ্টা মকবুল ও মঞ্জুর হয়ে যাবে, তখনই পরিবর্তন হয়ে আসবে।’
শেখ হাসিনা সরকারের ষড়যন্ত্র এবং জুলুম ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আপনারা বলবেন, তখন তো তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায়ই ছিল না। হ্যাঁ, তারা ছিল না, কিন্তু তারাই লগি-বইঠার তা-ব চালানোর প্রকাশ্য আহ্বান জানানোর মাধ্যমে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তারই ফল বাংলাদেশের জনগণ পরবর্তীকালে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। হয়তো কেউ কেউ তখন ভেবেছিলেন যে ঝড়-বাতাস যা যায়, জামায়াতের ওপর দিয়ে চলে যাবে।’
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের আমির ওই সময়ের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, এই ঝড় শুধু জামায়াতের জন্য আসেনি। এই ঝড় গোটা জাতির জন্য এসেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা যদি এই ঝড়ের সামনে না যাই, তাহলে কেউ এসব হায়েনার হাত থেকে রক্ষা পাব না। কোনো কোনো দলকে বলেছিলাম, আমাদের মাথা ধরেছে আপনাদেরও মাথা ধরবে, তৈরি থাকুন। কিন্তু আমরা বোঝাতে পারিনি। তারপর সবাই আমরা ধরা খেয়েছি দফায় দফায়। সর্বশেষ তা-ব ছিল ২০২৪ সালে।’
ইসলামের নামে বিভিন্ন ‘থট’ (চিন্তা) সম্পর্কে মুফাসসিরদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘পরাজিত স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন কায়দায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন ফরমে এসেছিল। আল্লাহ তাআলা সব ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, ধর্মীয় চাদর গায়ে দিয়েও নাকি তারা ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এমন কোনো পরিস্থিতির দিকে কেউ ঠেলে দেবেন না।’
আইন হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে অস্থির করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাসনক্ষমতা হাতে পাওয়ার আগপর্যন্ত কোনো অন্যায়ের প্রতিশোধ নিজেও নেননি, কাউকে নিতেও দেননি। বিচার হবে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায়।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীকে সবচেয়ে মজলুম দল দাবি করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘পরিবর্তনের পর আমরা আমাদের ভাইদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, শান্ত থাকুন দেশকে তার মূল জায়গায় ফিরিয়ে আসতে সাহায্য করুন। আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের কোথাও আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো অভিযোগ নেই। কোথাও কারও সম্পদের ওপর আমাদের কুনজর পড়েছে, এমন অভিযোগ আসেনি। কোথায় দখল-চাঁদাবাজির করে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলা হয়েছে, এমন অভিযোগও আসেনি।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘এর মানে, আমি দাবি করছি না যে আমরা সব ভুলের ঊর্ধ্বে। তবে আমাদের অঙ্গীকার থাকবে যে আমরা জানা অবস্থায় কোনো ধরনের সীমা লঙ্ঘন করব না, কারও হক নষ্ট করব না। দল-ধর্মনির্বিশেষ মানুষকে সম্মান করব।’
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে ওলামায়ে কেরামের অবদানকে উপেক্ষা না করতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকার। তারা প্রার্থী হয়ে এখানে আসেননি। কাজেই বৃহত্তর জনগণের চেতনা তাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সম্মান দেখাতে হবে। আশা করি তারা পারবে, দোয়া করি তাদের যেন সেই সদিচ্ছা থাকে। কেউ যেন তাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের চিন্তা না করেন। যদি কেউ ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের চিন্তা করেন, তাহলে পতিত স্বৈরাচারকে জনগণ ছেড়ে দেয়নি, আপনাদেরও ছেড়ে দেবে না। আর আপনারা যদি জনগণের চেতনাকে ধারণ করে এগোন, ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত আপনাদেরর পাশে থাকবে।’
আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ মজলিসুল মুফাসসিরিনের সভাপতি মাওলানা আবদুল আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম খান, সাইফুল আলম খান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, খলিলুর রহমান মাদানি প্রমুখ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com