‘ওয়াদা’ আরবি শব্দ যার শাব্দিক অর্থ-অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি, শপথ ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে- ওয়াদা বলা হয় সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে পরস্পরের সাথে লিখিত বা মৌখিক চুক্তি করা।
ওয়াদা রক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য : ওয়াদা রক্ষা করা নবী-রাসূল ও প্রকৃত মুমিন বান্দাদের অন্যতম গুণ। আর ওয়াদা ভঙ্গ করা মন্দ লোকের স্বভাব। যারা ওয়াদা রক্ষা করে না লোকসমাজে তারা অপমানিত হয় এবং সমাজের মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না। ওয়াদার মাধ্যমে সামাজিকভাবে প্রকৃত মানুষ চেনা যায় এবং এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব অঙ্গীকার পূরণ করা। কেননা, পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অঙ্গীকার পূরণের বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনরা, তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত-১)
ওয়াদার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য পবিত্র কুরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- যদি তোমরা (নিয়ামতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো, তবে তোমাদের (নিয়ামত) আরো বাড়িয়ে দেবো।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৭)
পবিত্র কুরআনে যেমন ওয়াদা পালনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি হাদিসেও ওয়াদা পালনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই। অনুরূপ যে ব্যক্তি অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার মধ্যে দ্বীন নেই।’ (মুসনাদে আহমদ-১২৫৬৭) অন্য হাদিসে ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মুনাফিক আখ্যা দেয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি : ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. যখন প্রতিশ্রুতি করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।’ (বুখারি-৩৩)
ওয়াদা পূর্ণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য : ওয়াদা পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য এই মহৎ গুণ হাসিল করা অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের সূরা মুমিনুনে প্রকৃত মুমিনের গুণাবলি সম্পর্কে ইরশাদ করেন- ‘সফলকাম হলো ওইসব মুমিন, যারা তাদের নামাজে গভীরভাবে মনোযোগী, যারা অনর্থক ক্রিয়াকর্ম এড়িয়ে চলে। যারা সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে। যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। তবে কেউ এ ছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ১-৭)
ওয়াদা ভঙ্গ করার পরিণাম : বিভীষিকাময় কিয়ামতের দিনে মহান আল্লাহ ওয়াদার ব্যাপারেও হিসাব নেবেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩৪) দুনিয়াবি সামান্য স্বার্থের জন্য মানুষ হরহামেশা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে।