ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছে। এ বছর ১০০ এর মধ্যে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪০। গত বছর একই সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ৪১। সেই হিসাবে এক ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। আর অবস্থানের হিসাবে ইন্টারনেটের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের নাগরিকরা এখন ‘আংশিক মুক্ত’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২৪’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম হাউজ’।প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে শুধু পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। দেশটির পয়েন্ট ২৭। আর ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। তারপরই অবস্থান করছে ভারত, দেশটির পয়েন্ট ৫০। তবে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে এ সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
পয়েন্ট নির্ধারণ যেভাবে: ইন্টারনেট সংযোগ পেতে বাধা, কনটেন্টের সীমাবদ্ধতা ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন- এ তিন সূচকের মানের সমন্বয়ে ১০০ পয়েন্টের স্কোর সাজিয়েছে ফ্রিডম হাউজ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে দেশের পয়েন্ট যত বেশি, সে দেশে নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা তত বেশি। প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
৭০ থেকে ১০০-এর মধ্যে পয়েন্ট থাকলে সেই দেশ ইন্টারনেটের স্বাধীনতার সূচকে ‘মুক্ত’। ৪০ থেকে ৬৯-এর মধ্যে থাকলে ‘আংশিক মুক্ত’। আর শূন্য থেকে ৩৯-র মধ্যে থাকলে সেই দেশকে ‘মুক্ত নয়’ বিভাগে রাখা হয়েছে। সেই হিসাবে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ‘আংশিক মুক্ত’ বিভাগে স্থান পেয়েছে। সমান পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অবস্থান ভাগাভাগি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাক।
অন্যদিকে ১০০ এর মধ্যে ৯৪ পয়েন্ট নিয়ে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে আছে আইসল্যান্ড। এরপরই আছে এস্তোনিয়া (৯২), চিলি (৮৬) ও কানাডা (৮৬)। র্যাংকিংয়ে সবার নিচে রয়েছে চীন (৯) ও মিয়ানমার (৯)।
কেন পেছালো বাংলাদেশ? বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন হয়েছে, সেসময় আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছিল। দফায় দফায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ও ধীরগতি করা হয়। তাছাড়া ইন্টারনেটের জগতে অযাচিত নজরদারি করতে এনটিএমসি নামে যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল, তা ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করেছে।
পাশাপাশি ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্যাশ সার্ভার ব্লক রাখাসহ নেতিবাচক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় সেই বিষয়গুলো উঠে আসায় হয়তো ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতায় পেছাতে পারে বাংলাদেশ।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইন্টারনেটে অযাচিত হস্তক্ষেপ সবসময়ই বাংলাদেশে ছিল। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সেই হস্তক্ষেপে আগের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব বন্ধ রাখায় বর্হিবিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটার প্রভাব তো এ সমীক্ষায় আছে। ফলে এমনটা হতে পারে। আশা করি, অন্তর্র্বতী সরকার প্রয়োজনের অধিক হস্তক্ষেপ করবে না। তবে সাইবার ক্রাইম যেগুলো, তা কিন্তু রুখতে সরকারকে তৎপর থাকতে হবে।’