আওয়ামী লীগের আমলে গড়া সিন্ডিকেট এখনো অন্তর্র্বতী সরকার ভাঙতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সারা জাতির ওপর জুলুম করেছে। এখনো সেই জুলুমের ভার এই জাতিকে বহন করতে হচ্ছে। জাতি যে প্রত্যাশা করেছে সেটা তারা পূরণ করতে পারেনি। জনগণকে সাথে নিয়ে সাহসিকতার সাথে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।’ গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আর একটি সন্তানও হারাতে চাই না। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। আমরা এমন হত্যাকা- আর চাই না। আমাদের আর পেছনে তাকানোর সময় নেই।’
তিনি বলেন, ‘যে চেতনার ভিত্তিতে এই বিপ্লব এসেছে তার বেশিভাগ অপূরণ রয়ে গেছে। যারা দেশের দায়িত্বে আছেন তাদের দেশের জনগণ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা তাদেরকে বলব, ১৮ কোটি মানুষকে আপনাদের সম্মান করতে হবে। এই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে সমস্ত জঞ্জালকে পরিষ্কার করার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে সাহসিকতার সাথে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, আমরা এমন একটি দেশ চাই যে দেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন- আমার দেশের একজন মা, একজন বোন, একজন ঔরসজাত মেয়ে একাকী রাস্তা অতিক্রম করবে কিন্তু কোনো জালিমের চক্ষু তার দিকে তাকানোর সাহস পাবে না। আজকে সে দেশটি আমাদের নেই। ওই জায়গা তৈরি করতে চাই। আমরা মায়ের জাতিকে ওই জায়গায় নিতে চাই যেখানে একজন মা একজন বোন, একজন মেয়ে বলবে, আমি এই দেশের গর্বিত নাগরিক। আমি ইজ্জত নিয়ে এ দেশে আছি। আমি আমার ইজ্জত ও অধিকার ফিরে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই। সমাজের কোনো স্তরে আমরা বৈষম্য মানব না। তারপরেও কিছু বৈষম্য থেকে যায়। যার যেটুকু মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ তৈরি করেছেন, তার সেটুকু মর্যাদা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের মধ্যে দল ও ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য চাই না। রাষ্ট্র সবার। এ জন্য রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা, শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বও সবার। আমরা এ দেশে কোনো মেজরিটি-মাইনোরিটি মানি না। আল্লাহ আমাদের এই অধিকার দেননি। দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি চলবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা (আওয়ামী সরকার) মানুষকে উপহাস করে আনন্দ পেত। আল্লাহ তাদের পাওনা কিছুটা পাইয়ে দিয়েছেন। বাকি আরো কিছু পাওনা এ দেশের মানুষ দেখতে চায়। আর মূল পাওনা হবে কেয়ামতের ময়দানে। আমরাও যদি কোনো অন্যায় অপকর্ম করি, তাহলে আমাদেরও কৃতকর্মের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘একটি শিশু জন্মের সাথে সাথে যেন পর্যাপ্ত খাবার পায়, চিকিৎসা পায়, বড় হলে যেন শিক্ষা পায়। শিক্ষা লাভ করার পরে সে যেন হাতের মধ্যে কাজ পায়। আমরা আর শিক্ষিত বেকার শুনতে চাই না। শিক্ষিত হলে বেকার হবে কেন? আমরা যুবকদের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করতে চাই। আমরা চাঁদাবাজ আর লুটেরার হাতে পরিণত করতে চাই না। খুনির হাতে পরিণত করতে চাই না। তাদের হাতের অবৈধ অস্ত্র তুলে দিতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই যুবকদের স্যালুট জানাই। তোমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরাও বলতে চাই, আবু সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। পূর্ণ মুক্তি যত দিন পর্যন্ত না আসবে, তত দিন এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’