কালীগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মোসলেম বিশ্বাসের মেয়ে নার্গিস বেগম জিবিএস নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন যশোর সদর হাসপাতালে। ২ দিন সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকার আগারগায়ে অবস্থিত সরকারি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফাড করেন। দ্রুত রোগীর স্বজনরা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে পারছিলে না। সেখান থেকে তাদেরকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে বলা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও যখন রোগী ভর্তি করতে পারছিলেন না; তখন রোগীর স্বজনদের চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে ওঠে। ঠিক সেই সময় দেবদূতের মত হাজির হন হাদিউজ্জামান জুয়েল নামের এক তরুণ। এই তরুণই নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নার্গিস বেগমকে আইসিইউতে ভর্তির সব ব্যবস্থা করে দেন। বোনের চিকিৎসা শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফেরে ভাই ও স্বজনদের মনে। ২৫ দিন পর আইসিইউতে থাকা নার্গিস বেগমের জ্ঞান ফেরে। এর কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে নার্গিস বেগম বাড়িতে ফেরেন। সার্বক্ষণিক নার্গিস বেগমের সুস্থতার ব্যাপারে সহযোগিতা এবং খোঁজখবর রেখেছেন জুয়েল। প্রতিবেদকের সাথে সে সময় বিপদের মুহূর্তে জুয়েলের সহযোগিতার গল্প করছিলেন নার্গিস বেগমের ভাই মনিরুল ইসলাম। শুধু নার্গিস বেগম নয় ; এরকম অনেক অসহায় রোগীর সহায় হিসেবে বর্তমানে খুব আলোচিত হাদিউজ্জামান জুয়েল। তার এই ধরনের ভালো কাজের প্রশংসা ছড়াচ্ছে জেলা ও উপজেলা ব্যাপী। মানবিক এই তরুণ হাদিউজ্জামান জুয়েল কালিগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের ষাটবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল হালিম ও দিলারা খাতুন দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান। যশোরে অবস্থিত সরকারি এম এম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স সম্পন্ন করে ২০১০ সালে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে জুয়েল ঢাকাতেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পীকার হিসেবে বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব, বিসিএস, ব্যাংক জব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে কাজ করেন। বৈবাহিক জীবনে স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। ছোটো বেলা থেকেই জুয়েল অত্যন্ত পরোপকারী এবং মানুষের সহযোগিতা করার মানসিকতাসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে। নিজ উপজেলা তথা ঝিনাইদহ জেলার দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ঢাকা শহরে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি, রোগীর খাবার দেওয়া, অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র রোগীদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মফস্বল এলাকা থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা শহরে যেয়ে প্রথমে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। কোনো অসুস্থ রোগীর স্বজনরা যদি হাদিউজ্জামান জুয়েল এর শরণাপন্ন হয় তাহলে তিনি তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। ঢাকায় অবস্থিত সরকারি নিউরোসাইন্স, বক্ষব্যাধি, ঢাকা মেডিকেল, পঙ্গু, পিজি, সোহরাওয়ার্দী, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আসা নিজ এলাকার রোগীদের নিয়মিত নানাভাবে সহযোগিতা করছেন মানবিক মানুষ আক্ষা পাওয়া এই তরুণ। জুয়েলের মানবিকতার এই গল্প উপজেলা ও জেলাব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে উপকার ভোগী মানুষের মুখে মুখে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিয়মিত দেখা যায় জুয়েলকর্তৃক রোগীদের সহযোগিতা করার বিভিন্ন স্থিরচিত্র। এ ব্যাপারে হাজিউজ্জামান জুয়েলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতা করা আমি আমার দাদা ছাত্তার বিশ্বাসের কাছ থেকে শিখেছি। বলতে পারেন এটা আমার পারিবারিক শিক্ষাও। ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। যে কারণে আমার নিজ জেলা ও উপজেলার যে কোনো রোগী বা তার স্বজনরা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ রুগীকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে আমি সহযোগিতা প্রদান করেছি। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সহযোগিতা করতে যেয়ে সেখানকার স্টাফদের সাথে আলাদাভাবে পরিচয় হয়েছে, এমনকি তাদের সাথে ভালো সম্পর্কও তৈরি হয়েছে আমার। যে কারণে এখন আমি সহজেই হাসপাতালগুলোতে এলাকা থেকে আসার রোগীদের সহযোগিতা করতে পারি। আমি আমার শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াই। কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্যে নয় ; সেবার ব্রত নিয়েই আমি কাজটি করে যাচ্ছি। যা আজীবন অব্যাহত রাখতে চাই। মানুষের সহযোগিতা ও সেবা করার মধ্যমে বেঁচে থাকতে চায় একজন মানবিক মানুষ হিসেবে।