সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

দুর্বল ৬ ব্যাংককে ১৬৪০ কোটি টাকার সহায়তা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

তারল্য সঙ্কটে ভুগতে থাকা দুর্বল ছয় ব্যাংককে মোট এক হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে সবল তিন ব্যাংক। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, তারল্য সঙ্কটে ভুগতে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলো সহায়তা করতে ঋণ দিচ্ছে সবল ব্যাংকগুলো। এতে আর্থিকভাবে কিছুটা সঙ্কট কাটিয়ে উঠছে তারল্য সঙ্কটে পড়া দুর্বল ব্যাংকগুলো।
সোনালি ব্যাংক পিএলসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি ও ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি ছয়টি ব্যাংককে এক হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক ৩৭৫ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক ৩০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫০ কোটি ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক পেয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। আর ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি ৩২০ কোটি ও এক্সিম ব্যাংক পিএলসি তারল্য সহায়তা পেয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ব্যাংকের ওপরে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে ব্যাংককে যত টাকায় দেয়া হোক না কেন, ব্যাংক এত মানুষের চাপ সামাল দিতে পারবে না।
মানুষকে অহেতুক হুমড়ি খেয়ে না পড়ায় আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকের আস্থা ক্ষুন্ন হবে না। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে সবল ১০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালি ব্যাংক, বেসরকা‌রি খাতের ব্র্যাক, ইস্টার্ন, সিটি, শাহ্জালাল ইসলামি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পুবালি, ঢাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক জানানো হয়, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেয়া ঋণের টাকা ফেরত চাইলে সবল ব্যাংকগুলোকে তিন দিনের মধ্যেই তা ফেরত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঋণের সুদ হার নির্ধারণ হবে চলতি রেটে।
রিজার্ভে হাত না দিয়েই ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ: রিজার্ভে হাত না দিয়েই ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তা না করে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো অর্থ ব্যয় না করেই গত দুই মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার (১১৯ টাকা হিসেবে ১৭ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা) দেনা পরিশোধ করেছে। আর এর ফলে পণ্য আমদানিতে অনিশ্চয়তা কাটতে শুরু করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব দায় মেটানো শেষে আরো ইতিবাচক ধারায় ফিরবে দেশের অর্থনীতি।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লাসহ যাবতীয় পেট্রোলিয়াম পণ্যের প্রায় পুরোই আমদানি করতে হয় বিভিন্ন উৎস থেকে। যার পেছনে সর্বশেষ অর্থবছরে ব্যয় হয় প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া, বিদ্যুৎ ও সারের ক্ষেত্রেও নির্ভরতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু, গেল বছর দুয়েক ধরে ডলার সঙ্কট শুরু হলে, সেই ব্যয় পরিশোধ করা যায়নি সময়মতো।
তিনি বলেন, এই বাস্তবতায় আদানি, কাফকোসহ, শেভরন ও বিপিসিকে সরবরাহকারীসহ বেশকিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়ে যায় সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারের উপরে। তবে, গেল দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়েই, সেই বকেয়ার দেড় বিলিয়ন পরিশোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাকি অংশও মাস দুয়েকের মধ্যে মিটিয়ে দেয়ার আশা গভর্নরের।
তিনি আরো বলেন, ২.৫ বিলিয়নের মতো অনাদায়ী, অনিষ্পন্ন দায় ছিল সরকারের। সেটা ছিল ডলারের। সেটা আমরা কমিয়ে ৭০০ মিলিয়নে নিয়ে এসেছি। সারের জন্য প্রচুর টাকা দেয়া হয়েছে, বিদ্যুতের জন্য দেয়া হয়েছে, আদানি-শেভরনকে দেয়া হয়েছে। সবার দেনাটা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে দেনা জিরোতে নামিয়ে আনব। তখন বাজারে লিকুইডিটা আরো বাড়বে। গভর্নর মনসুর বলেন, এসব বকেয়া পরিশোধের পর, চাপ কমবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। যা গতি বাড়াবে সার্বিক কর্মকা-ে। একই সাথে, প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আরো প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহের। কিন্তু, বর্তমানে ১০৩ বিলিয়নের বিদেশী ঋণ ও পরিশোধের ধারাবাহিক বাড়তি চাপে কিছুটা চিন্তিত গভর্নর। বলেন, অবস্থা সামাল দিতে ধৈর্য ধরতে হবে অন্তত এক বছর।
গভর্নর আরো বলেন, যদি আমি আইএমএফ থেকে ২-৩ বিলিয়ন অতিরিক্ত পাই, এর সাথে বিশ্বব্যাংকের আরো ২ বিলিয়ন পাই। তা হলে এই ৫ বিলিয়ন নিয়ে দুটো জিনিস করতে হবে। সরকার কিছু ব্যয় বাড়াতে পারবে, এতে করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা গতিশীল পাবে। এখনই লম্প-ঝম্প করলে হবে না যে আমার বিনিয়োগ নাই। এখন বিনিয়োগ হবে না, কম হবে, এটাই বাস্তবতা। এখন বিশ্বব্যাংক বলছে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়ত ৪ শতাংশে নেমে আসবে। হতে পারে, আমিও মনে করি ৪-৫ মধ্যে হয়ত হবে। হোক তাও সেটা একটা বছরই তো।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com