সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন

দাদন ও ঋণের চাপে চরফ্যাশনের জেলেরা

অশোক সাহা চরফ্যাসন
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

লাখ টাকা খরচ করে আশানুরূপ ইলিশ জালে আটকা না পরায় ভোলার চরফ্যাশনের জেলেরা সাগর থেকে ফিরছে খালি হাতে। মহাজনদের দাদন ও ঋনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে দুচিন্তাাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে মাঝি মাল্লারা। জেলেদের একমাত্র আয়ের উৎস সাগরে মাছ শিকার করা কিš‘ বিগত কয়েক বছর ইলিশ জালে ধরা দিবে এমন আশায় আশায় গ্রস্থ হয়ে পড়েছে জেলেরা। বর্তমান সময়ে আর্থাৎ জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায় গত ১৩আক্টোবর থেকে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়ায় টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এসব জেলেরা। অন্যদিকে সরকার জেলেদের অবরোধকালীন চাউল দিলেও প্রকৃত জেলেরা চাল না পাওয়া গতকাল চরফ্যাশন পৌর মৎস্যজীবি দল সভাপতি বাবুল সিকদারের নের্তৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বঞ্চিত জেলেরা। চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছেন, ইলিশের অভয়াশ্রম তেঁতুলিয়া ও মেঘনা নদীতে এই অঞ্চলের জেলেরা ইলিশ মাছ শিকার করে। সুষ্ঠু, প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য মাছ শিকারের ক্ষেত্রে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ১৩ অক্টেবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগরে জারি থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা এই উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। তবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১ জন। অনিবন্ধিত প্রায় ৪৬ হাজার। জেলে আলমগীর বলেন, মহাজনদের দাদন ও এনজিওর ঋণ খেলাপিতে মুনাফা বেড়ে দুচিন্তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। তার মত জেলে পল্লীতে চলছে অনেকের নীরব কান্না। উপজেলার সামরাজ, খেজুর গাছিয়া ও মাইনুদ্দি মৎস্য ঘাটে গেলে জেলে মনির, খোরশেদ ও সামসুদ্দিন জানান, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভড়া মৌসুম। জেলেরা সারা বছর ধরে এ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে। মৌসুম চলে আসলে পূর্ণ আশা নিয়ে জেলেরা ইলিশ আহারণের জন্য তেঁতুলিয়া ও মেঘনা নদীতে নেমে পড়েন। তবে কয়েক বছর আশঙ্কাজনক হারে ইলিশ কমে যাওয়ার কারনে জেলেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বছরে কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা ও দুর্যোগের কবলে পড়ে অনেকে নিঃস্ব। তারপরও বারবার আশাহত হয়েও হাল ছাড়ছেন না। নিষেধাজ্ঞা দেওয়াতে জেলেরা পড়ছেন অস্তিত্ব সংকটে। মহাজনদের দাদন এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। সরকার ২২ দিনের অবরোধে ৪০ শতাংশ জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ করেছে, যা প্রহসন। অনিবন্ধীত ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত কয়েক জন জেলে জানান, এখনো পর্যন্ত অনেক প্রকৃত জেলে নিবন্ধনের সুযোগ পায়নি। নামে মাত্র অনেক জেলে নিবন্ধনের সুযোগ পেয়ে সরকার বরাদ্দ চাল গ্রহণ করে থাকে। পাশাপাশি অনেক জেলে পেশা পরিবর্তনের পরেও এ সুবিধা গ্রহণ করে যাচ্ছে। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সামান্য চাল বরাদ্দে তাদের জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সরকারি অনুদান বৃদ্ধি পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের অনুরোধ করেন তারা। সামরাজ মৎস্যঘাট আড়ৎদার সমিতির সেক্রেটারী আলাউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, আশায় আশায় বার মাঝি মাল্লাদেরকে দাদন দিয়ে সাগরে (নদীতে) পাঠাই কিন্তু তার আর সে টাকা পরিশোধ করতে পারে না বরং নদীতে গেলে আবারও টাকা দিতে হয়। নদীতে জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পরায় আমরাও হতাশা, র্দুচিন্তগ্রস্থ ট্রলার মালিক মো. সালাউদ্দিন জানান, সরকার মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি। চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে জেলেদের জালে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়েনি। পাবার আশায় বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এবং মহাজনদের কাছ থেকেও অগ্রিম টাকা নেন। জেলেরা যেন ঋণগ্রস্থ না হয় সেইদিকে খেয়াল করে সরকার তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com