ইতিহাসে চারজন মানুষ পুরো পৃথিবী শাসন করেছেন। তাঁদের মধ্যে হজরত সুলাইমান আ: ছিলেন অন্যতম। তাঁর শাসন শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সমস্ত সৃষ্টিজগতের উপর তা চলত সমানভাবে। পশু-পাখিসহ সব প্রাণীর ভাষা তিনি বুঝতেন। হুদহুদ পাখি এবং একটি পিঁপড়ার সাথে নবী সুলাইমান আ: -এর কথোপকথনের ঘটনা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর রাজত্ব চলত জিন জাতির উপরও। তিনি জিন শ্রমিকদের দ্বারা মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদে আকসা নির্মাণ করেন। এখান থেকেই আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মেরাজের (ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণের) সূচনা হয়েছিল। হজরত সুলাইমান আ: এত বড় রাজত্ব পেয়েও আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যাননি। তাঁর ইবাদতে কখনো অবহেলা করেননি। কাজ কিংবা রাজ্য শাসনের দোহাই দিয়ে কখনো কোনো ইবাদতে অলসতা পর্যন্ত করেননি। এমনই এক প্রভু প্রেমের অপূর্ব উদাহরণ হলো নিম্নেল্লিখিত ঘটনা।
হজরত সুলাইমান আ:-এর এক হাজার মতান্তরে ২০ হাজার হৃষ্টপুষ্ট দ্রুতগামী ঘোড়া ছিল। যার ওপর আরোহণ করে তিনি স্বীয় রাজ্য পরিভ্রমণ ও আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতেন। একদিন বিকেল বেলা তিনি ঘোড়াগুলো পর্যবেক্ষণ করতে বের হলেন। মুগ্ধ নয়নে এগুলো দেখতে দেখতে কখন সূর্যাস্ত হয়ে যায়, সে দিকে তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ফলে বৈকালীন নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পর তিনি এহেন কর্মের জন্য খুব আক্ষেপ করতে থাকেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন, যে ঘোড়া মহান রবের ইবাদত থেকে আমাকে বিস্মৃত করে রেখেছে, সেগুলো আমি নিজের কাছে রাখব না। এই বলে সবগুলো ঘোড়া আল্লাহর জন্য কোরবানি করে দেন (তখন ঘোড়ার কোরবানি বৈধ ছিল)। আল্লাহ তায়ালা তাঁর এ কাজে খুশি হয়ে ডুবে যাওয়া সূর্য পুনরায় ফিরিয়ে দেন। সুলাইমান আ: তখন ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় করেন। সবগুলো ঘোড়া কোরবানি করার ফলে তাঁর আর কোনো বাহন অবশিষ্ট রইল না। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা বাতাসকে তাঁর আজ্ঞাবহ করে দেন। এর পর থেকে তিনি স্বীয় সুবিশাল সিংহাসন ও দলবলসহ বাতাসে উড়ে এখানে সেখানে গমন করতেন এবং রাজ্য পরিচালনা করতেন। লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।