মিথ্যা বা ভুল কোনো কিছু প্রচার করাকে রটনা বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে ভিত্তিহীন ও ভুল প্রচার অগ্রহণযোগ্য। রটনা ও অপপ্রচারের ব্যাপারে ইসলামের ভাষ্য তুলে ধরা হলো।চালিয়ে দেওয়া ভয়াবহ অপরাধ: পবিত্র কোরআনের সুরা নুরে ‘ইফক’-এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০টি আয়াত নাজিল হয়, যা ছিল একটি মিথ্যা রটনা। ইফক শব্দের অর্থ কোনো জিনিসকে উল্টে দেওয়া। এই ঘটনায় যেহেতু রটনাকারীচক্র আসল ব্যাপারটি উল্টে দিয়েছিল, তাই তা ইতিহাসে ইফক নামে প্রসিদ্ধ। এই ঘটনার জন্য দায়ী চক্রটিকে আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘উসবা’, যার অর্থ ‘এমন একটি দল ও জামাত, যারা একে অন্যের সঙ্গে মিলে শক্তি বৃদ্ধি ও পক্ষপাতিত্ব করে থাকে’। এমন সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের শাস্তি ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে তাদের পাপ কাজের প্রতিফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তার জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি। (সুরা : নুর, আয়াত : ১১)রটনার পার্থিব শাস্তি: রটনা মিথ্যা প্রচার। তবে প্রচার পাওয়ার পর কেউ কেউ এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে প্রলুব্ধ হয়। তবে মনে রাখতে হবে, কখনো কখনো মহান আল্লাহ মিথ্যা রটনাকে শাস্তি হিসেবেও বাস্তবায়ন করেন। এ জন্য নবীজি (সা.) মিথ্যা (বানোয়াট) স্বপ্ন বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫০৯)ওমর (রা.) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, মিথ্যা রটনা বা বর্ণনা বাস্তবে ঘটার জন্য অনেক সময় দায়ী হয়। তিনি এ ক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন। তা হলো—‘যে বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’
(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪১; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক) এ ক্ষেত্রে আল্লামা ইবনে সিরিন (রহ.)-এর একটি ঘটনা প্রণিধানযোগ্য। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার হাতে যেন একটি কাচের পেয়ালা।সেটি ভেঙে গেল, কিন্তু তার পানি রয়ে গেল।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কিন্তু এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখনি।’ লোকটি রাগ হয়ে বলল, ‘সুবহানাল্লাহ! (আমি মিথ্যা বলিনি)।’ তখন ইবনে সিরিন (রহ.) বললেন, ‘যদি স্বপ্ন মিথ্যা হয়, তাহলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না। আর এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হলো, তোমার স্ত্রী মারা যাবে আর পেটের বাচ্চা জীবিত থাকবে।’ এ কথা শুনে লোকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি সত্যিই কোনো স্বপ্ন দেখিনি।’ এর কিছুক্ষণ পর তার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে এবং তাতে তার স্ত্রী মারা গেছে। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)কোনো অপপ্রচার তুচ্ছ নয়: কখনো কখনো মানুষ সমাজে ছড়িয়ে পড়া বিষয়গুলোকে তুচ্ছ মনে করে এবং এর পরিণতি নিয়ে ভাবে না। ফলে সে অন্যকে তা বলতে দ্বিধা করে না। এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহ তাআলা ইফকের ঘটনার ব্যাপারে বলেন, ‘যখন তোমরা মুখে মুখে এটা ছড়িয়ে দিচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে, যার কোনো জ্ঞান তোমাদের ছিল না। আর তোমরা এটাকে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর বিষয়। আর তোমরা যখন এটা শুনলে তখন কেন বললে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়; আল্লাহ পবিত্র, মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ!’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৫-১৬) মুমিন রটনা পরিহার করবে: মুমিন যদি কোনো ঘটনার অসারতা বুঝতে পারে, তবে তা পরিহার করবে। এমনকি এ বিষয়ে কৌতূহলও দেখাবে না। ইমাম মালিক (রহ.) বললেন, যা ঘটে তা জিজ্ঞাসা কোরো, যা ঘটেনি তা নিয়ে জিজ্ঞাসা বর্জন কোরো। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করুন। মিথ্যা বলা, মিথ্যার প্রচার করা, অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করা থেকে দূরে রাখুন। আমিন। লেখক : প্রক্টর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা