সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়ার শিবগঞ্জে আলু বীজ বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট! কুড়িগ্রাম যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হস্তশিল্পের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদলে গেছে নারী উদ্যোক্তা রাজিয়ার তারাকান্দায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ চকরিয়ায় সামাজিক বনায়ন উদ্ধারে মানববন্ধন ও র‌্যালি বরিশাল বিভাগীয় সাংবাদিক পরিষদের ২০২৪ বিদায় উপলক্ষে সভা বীরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা বিএনপি সভাপতির মতবিনিময় সভা পাঁচবিবিতে কোয়েল পাখি পালনে হাসানের মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা মোংলার মাটিতে কোন ফ্যাসিস্টদের ঠাঁই হবে না-সমন্বয়ক মোল্ল্যা রাহমাতুল্লাহ সিংড়ায় আমি মধ্যবিত্ত কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন মুক্তির ডাক ৭১: নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

রাসূল সা:-এর যুগের ব্যাংকব্যবস্থা বনাম আধুনিক ব্যাংকিং

ড. ইকবাল কবীর মোহন
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

বর্তমানে অর্থনীতি ও ব্যাংকিং মানবজীবনের অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই অর্থনৈতিক কার্যাবলির অস্তিত্ব ছিল। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনার সাথে অর্থ, বাণিজ্য ও ব্যবসায়ের সম্পর্ক নিবিড়। মানুষমাত্রই বেঁচে থাকার জন্য খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার কথা অস্বীকার করতে পারে না। আর এসব বিষয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত জীবিকা উপার্জন। জীবিকা উপার্জনের প্রাথমিক শর্ত হলো মূলধন বা পুঁজি, শ্রম এবং ভূমি। এসব বিষয়ের যৌথ বা সমন্বিত রূপ হচ্ছে অর্থনীতি। সম্পদ অর্জন এবং বণ্টন বিষয়ে সমন্বিত বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করে অর্থনীতি। মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ও এর সমাধান, অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের বিষয়গুলো অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. এম এ মান্নানের মতে, ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞা হলো, ‘এটি এমন একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।’ বিশ^খ্যাত ইসলামী অর্থনীতিবিদ ড. উমর চাপড়া, ড. নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকী, ড. এস এম হাসানউজ্জামান, ড. আবদুর রহমান ইউসারি ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে প্রায় একই রকম সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। ইসলামের আগমনের পর অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনা করার জন্য কুরআনের বিধান ও মহানবী সা:-এর প্রদর্শিত নিয়ম-কানুনের প্রচলন শুরু হয়েছে। এরপর কালক্রমে সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতির সাথে সাথে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রসার লাভ করেছে। এই বিকাশের সাথে সাথে চালু হয়েছে ব্যাংক ও বীমাব্যবস্থা। এই প্রবন্ধে আমরা বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব।
রাসূল সা:-এর যুগে অর্থব্যবস্থা : বলা আবশ্যক যে, ইসলামের আগমনের আগে আরব দেশে পোশাক শিল্প, চর্মকার ও রাখালের পেশা ইত্যাদি অর্থনৈতিক কর্মকা- প্রচলিত ছিল। ব্যবসাই ছিল আরবদের আয়-উপার্জনের প্রধান অবলম্বন। তবে তখন সুদের ব্যাপক প্রচলন ছিল। মহানবী সা:-এর দাদা, চাচা, মামা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন। কুরাইশ বংশের লোকেরা বাণিজ্যের উদ্দেশে শীতকালে ইয়েমেন ও গ্রীষ্মে সিরিয়ায় ভ্রমণ করত। মহানবী সা:ও চাচা আবু তালিবের সাথে ব্যবসায়িক কারণে ১২ বছর বয়সে সিরিয়ায় ভ্রমণ করেন। আরবের প্রচলিত নিয়মে এসব ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচলিত হলেও ইসলামের বাণী লাভের পর অর্থনৈতিক কর্মকা- কুরআনের নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হতে থাকে। ব্যবসায় ও অর্থনৈতিক লেনদেনে সুদের প্রচলন নিষিদ্ধ করা হয়। কুরআনের চারটি সূরার ১২টি আয়াতে সরাসরি সুদ পরিহার করার আদেশ দেয়া হয়। সুদের প্রথম আয়াতে বলা হয়, ‘মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় যা কিছু তোমরা সুদে দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বর্ধিত হয় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু তোমরা জাকাতরূপে দিয়ে থাক তাই বৃদ্ধি পায় এবং এরূপ লোকেরাই বহুগুণে সম্পদপ্রাপ্ত।’ (সূরা আর রুম, আয়াত : ৩৯) সুদের তৃতীয় আয়াতে সুদ থেকে বেঁচে থাকাকে সফলতা হিসেবে ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সুদ খেয়ো না চক্রবৃদ্ধি হারে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৩০) সুদের চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ সুদ গ্রহণের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বলেন, ‘যারা সুদ খায় তারা ওই ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। এ অবস্থা তাদের এজন্য যে তারা বলে, বেচাকেনা তো সুদেরই মতো। অথচ বেচাকেনাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে অবৈধ করেছেন। যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে নিবৃত্ত হয়েছে, তবে আগে যা হয়ে গেছে তা তার, আর তার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সোপর্দ। কিন্তু যারা আবারো সুদ নেবে, তারাই দোজখবাসী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা আল-বাকারা : ২৭৫) সুদ গ্রহণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শামিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তারপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তা হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে তৈরি হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের জন্য তোমাদের মূলধন রয়ে যাবে। তোমরা কাউকে অত্যাচার করবে না আর না কেউ তোমাদের অত্যাচার করবে।’ (সূরা আল-বাকারা : ২৭৯)। কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মহানবী সা:-এর অর্থব্যবস্থা ছিল সুদমুক্ত।
ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার উৎপত্তি ও বিকাশ : আমাদের সবার জানা, অর্থনীতি এবং ব্যাংকব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থনীতির বাস্তব রূপ হলো ব্যাংকিং কার্যক্রম। অর্থনৈতিক কার্যক্রম তথা ব্যবসা-বাণিজ্য সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং সহজিকরণ ব্যাংকের অবদান ছাড়া আজকাল কল্পনা করা যায় না। অতীতকালেও ব্যাংকের তেমনি গুরুত্ব ছিল। তবে সেটি বর্তমান সময়ের মতো অতটা আধুনিক ও বিকশিত ছিল না। ইসলামের অভ্যুদয় হয় এখন থেকে ১৪৪৪ বছর আগে। আমরা আগেই বলেছি, ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর মহানবী সা:-এর আমলে তিনি সুদমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামের বিকাশের সাথে সাথে যুগ পরিক্রমায় ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। আমরা তিনটি পর্যায়ে ইসলামী ব্যাংকের উৎপত্তি ও বিকাশ আলোচনা করতে পারি। (চলবে)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com