মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে বদলে যেতে পারে অবহেলিত চরাঞ্চলবাসীর জনজীবন গাউসিয়া কমিটি নিরামিশপাড়া শাখার ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা নড়াইলে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন টেক্সাস বিএনপির সেক্রেটারি জহিরুল ইসলাম কাপাসিয়া রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ফুলপুরে ভিক্ষুক পুনর্বাসন সহায়তা হারাগাছ হাসপাতালের মসজিদের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন কোম্পানীগঞ্জে এস,এ,এইচ কনস্ট্রাকশনে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন প্রতিযশা শিক্ষক প্রফেসর আশরাফ আলী আর নেই শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র উপহার প্রদান ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা

আগামীতে দেশজুড়ে হবে বাণিজ্য মেলা: প্রধান উপদেষ্টা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫

আগামীতে দেশজুড়ে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আগামীতে বাণিজ্য মেলা হবে দেশজুড়ে, বিদেশিদের নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মেলা হবে। উপজেলা থেকে সেরা উদ্ভাবন আনতে পারলেই হবে প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।”
তিনি বলেন, “মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। মানুষের কাজই হলো নিজের মন মতো কাজ করা। বাণিজ্য মেলা মানুষকে নিজের উদ্যোগকে ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।” এর আগে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিশ্বের ৭টি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানসহ মেলায় থাকছে ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দিয়ে হয়েছে জুলাই চত্বর, ছত্রিশ চত্বর ও তারুণ্যের প্যাভিলিয়ন। ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশ পথে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা।
প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল বা প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস। মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশু পার্কও।
এছাড়া, মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর। সঙ্গে দেশের তরুণ সমাজকে রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধকরণে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।
মেলা মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মেলা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজন করা হতো। করোনার কারণে ২০২১ সালে মেলা আয়োজন করা হয়নি। আর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা পূর্বাচলে
বিবিসিএফইসিতে আয়োজন করা হয়।
বাসস সূত্রে প্রকাশ, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে হবে, যাতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। গতকাল বুধবার, রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হবার শক্তি মেলার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে ভবিষ্যতের মেলা হবে সারা দেশ জুড়ে জায়গায় জায়গায় এবং ঢাকায় হবে কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত মেলা। তরুণদের জন্য আমরা সুযোগ তৈরি করে দেবো। মেলার প্রস্তুতি সারা বছর ধরে চলবে জেলা ও উপজেলায়। সেখান থেকে বাছাই করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে মেলায় কারা অংশগ্রহণ করবে। ঢাকার মেলায় একজন আর একজনকে দেখে শিখবে, বুঝবে এবং বুদ্ধি নেবে। বাংলাদেশের তরুণরা সম্ভাবনাময় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অনেক তরুণ-তরুণী কৃষি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, আইসিটিসহ বিভিন্নখাতে ব্যবসায় ভাল করছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা করছে- ঘরে বসে সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রি করছে। কাজেই প্রত্যেক উপজেলায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ জনকে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য। সারা দেশ থেকে তরুণরা দলে দলে এদেরকে দেখতে আসবে। বিদেশ থেকে আসবে। ঢাকায় মেলায় একজন আরেকজনকে দেখে উৎসাহ পাবে।
এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীরা কেবল বাংলাদেশের সেরা না, তাদের মধ্যে অনেকে দুনিয়ারও সেরা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে আসা তরুণদের খরচ সরকার বহন করবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে, কারণ তারা তো আমাদের পথ প্রদর্শক। তারা জাতিকে পথ প্রদর্শন করবে। দুনিয়াকে পথ প্রদর্শন করবে। অন্যরা তাদের দেখে শিখবে, বিনিয়োগ করতে আসবে। এখানে বিনিয়োগকারিরা আসবে জানার জন্য, বোঝার জন্য- কোন ব্যবসাটা তার জন্য ভালো হবে।
উদ্যোক্তা হবার ক্ষেত্রে টাকার অভাব কোন বাধা নয় উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘টাকা নেই, এটা কোন বিষয় না- বুদ্ধি থাকলে টাকা উপার্জন করা যায়। কাজেই আমরা চাই আমাদের তরুণ তরুণী, বয়স্ক বয়স্কা সবাই যেন উদ্যোক্তা হবার শক্তি এই মেলার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারে। তাহলে এই মেলা সবার জীবনে বড় ধরনের প্রভাব রেখে যাবে আমাদের জন্য।
বাংলাদেশ একটা অপূর্ব সুযোগের দেশ উল্লেখ করে সরকার প্রধান আরও বলেন, আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি- ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশ। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ হলো তাজা তরুণ-তরুণী। এরকম শক্তি খুব বেশি দেশের কপালে নেই। এ কারণে বারে বারে বলছি, এই তারুণ্য শক্তিকে উন্মোচিত করার কথা। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা। আরেকটা বিষয় বারে বারে দৃষ্টি আকর্ষণ করি-মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা, শ্রমিক নয়। অন্যের হুকুমে কোন কিছু সৃষ্টি করা মানুষের পথ না। মানুষের পথ হলো নিজে সৃষ্টি করা। নিজের চিন্তায় নিজের ভাবনায় যেটা আসে সেটা তৈরি করা। এই মেলা আমাদেরকে সেই সুযোগ করে দেয়। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তরুণদের জন্য আলাদা জায়গা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার একাংশ তরুণদের জন্য থাকবে, এখানে ২৫ বছরের নিচে হতে হবে এ রকম একটা শর্ত দিয়ে দেয়া যেতে পারে। ২৫ বছরের নিচে যারা তারা এখানে কেউ আসবে অন্যের কাছ থেকে শিখতে, আবার কেউ আসবে অন্যকে শেখাতে। তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরা ভাল ভাল ব্যবসা পরিচালনা করছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অনেক তরুণী রয়েছে যারা অসংখ্য কাজ করে। ঘরে বসে শাড়ি বিক্রি করে। গৃহিনী চার-পাঁচ বাচ্চার মা ব্যবসা করে- ঘরে বসে রান্না করে খাবার সরবরাহ করে। অর্ডার দিলে ঠিক সেই আইটেমগুলো রান্না করে সরবরাহ করছে। চমৎকার বুদ্ধি খাটিয়ে এ ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য যারা করছে-তাদের কাজ তুলে ধরতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও রপ্তানি সমৃদ্ধ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, রপ্তানি পণ্যের মান উন্নয়নে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে আরও জোরদার, প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দ্রুততার সঙ্গে সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টা ফার্নিচার পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তিনি বর্ষ উদ্যোক্তা ঘোষণা করার বিষয়ে তাঁর অভিপ্রায়ের কথা উল্লেখ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) আব্দুর রহিম খান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস- চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। প্রতি বছরের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি যৌথভাবে মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’ ও ‘ছত্রিশ চত্বর’। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com