ইসলামের শুরু থেকেই মুসলিম নারীরা শুধু দ্বীনী ইলম-আমলেই নয়; ইসলাম প্রচার-প্রসারেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। ইসলামী আন্দোলনের নানা দিক ও বিভাগে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। রাসূলুল্লাহ সা:-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা মুসলিম নারীদের ঐতিহ্য। তারা কখনো মাঠে সশরীরে; আবার কখনো পুরুষদের পাশে থেকেও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এক কথায় ইসলামের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীরবে ও সম্মুখে ভূমিকা রেখেছেন নারী সাহাবিরা। রাসূল সা: ওহি নাজিলের খবর প্রথম বলেছিলেন আম্মাজান খাজিদা রা:-এর কাছেই। তিনি নবী সা:-কে সান্ত¡না দিয়েছেন। নবী সা:-কে তার পথচলার উৎসাহ জুগিয়েছেন। হজরত খাদিজা রা: নবী সা:-কে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! তিনি আপনাকে অসম্মান করবেন না। কেননা, আপনি আত্মীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সুন্দর সম্পর্ক রক্ষা করেন। (বুখারি)
হুদাইবিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সেই সন্ধির পেছনেও ছিল নারী সাহাবি ও রাসূল সা:-এর স্ত্রী উম্মে সালামা রা:-এর অপরিসীম ভূমিকা। যখন কেউ কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিলেন না, তখন তিনিই নবী সা:-কে বসে ঠা-া মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের জ্ঞানবিস্তারে হজরত আয়েশা রা: অতুলনীয়। ইলমি জ্ঞানে অনেক পুরুষ সাহাবি থেকেও তিনি বেশি প-িত ছিলেন। শুধু জ্ঞান আর উৎসাহ দিয়েই নারী সাহাবিরা ক্ষান্ত হননি। নারী সাহাবি হজরত নুসাইবা রা: অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। আর হজরত রুফাইদা রা: আহত সাহাবিদের দিন-রাত সেবা দিয়েছেন। যুদ্ধে গিয়ে কেউ আহত হলেই নবী সা: তাকে নারী সাহাবি রুফাইদা রা:-এর কাছে নিয়ে যেতে বলতেন।
বিভিন্ন সিরাত ও ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, হজরত আয়েশা ও উম্মে সালমা রা: ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহানবী সা:-এর ফুফু সুফিয়া বিনতে আবদিল মুত্তালিব রা: খায়বর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মুল খায়ের, জুরকা বিনতে আদি, ইকরামা বিনতে আতরাশ ও উম্মে সিনান অসংখ্য যুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কাজে সহযোগিতা করেন। আজরা বিনতে হারিস বিন কালদা সেনাদলের নেতৃত্ব প্রদান ও আহলে বিসানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
উম্মে আম্মারা রা: ওহুদের যুদ্ধে মহানবী সা:-এর জীবন রক্ষায় প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করেছিলেন। মহানবী সা: তাকে ‘খাতুনে ওহুদ’ উপাধি দিয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সামুদ্রিক অভিযানে প্রথম শাহাদাত বরণ করেন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা:। উম্মে আতিয়া আনসারি রা: মহানবী সা:-এর সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উমাইয়া বিনতে কায়েস কিফারিয়া খায়বর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে হাকিম বিনতে হারিস রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে আয়মন হাবশি রা: ওহুদ, হুনাইন, খায়বর ও মোতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে সুলাইম রা: খায়বর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান ইসলামের প্রথম নারী নৌযোদ্ধা। রাবি বিনতে মুয়াওয়াজ রা: বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নাসিবাহ বিনতে কাব আনসারিয়া ওহুদ, বনি কুরাইজা, হুদায়বিয়া, খায়বর, হুনাইন ও ইয়ামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়