১৯৯১ সালে বাংলাদেশে প্রথম গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। প্রথমবারের মতো এ গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করে বুয়েট। এরপর পরীক্ষার অন্যান্য শাখায় বিভাগ পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়। এসএসসি পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয় ২০০১ সালে। আর ২০০৩ সালে এই পদ্ধতি চালু হয় এইচএসসি পরীক্ষায়। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধু নম্বর দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তন আনা হয় ফলাফলের প্রকাশ ভঙ্গিতে। ২০০১-এর আগে ৮০ ওপর নম্বর পেলে বলা হতো লেটার মার্কস আর গ্রেডিংয়ে বলা হয় জিপিএ-৫। তবে রয়ে যায় নানা জটিলতা। যেমন আগে প্রতিটি নম্বর কাউন্ট হতো এখন তা হয় না বরং গ্রেড থেকে গ্রেডে অনেক ক্ষেত্রে ১৯ নম্বর পর্যন্ত অমূল্যায়িত থেকে যায়। আবার চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ না হওয়ায় ঐ বিষয়ের পুরো নম্বরই অমূল্যায়িত থেকে যায়। ফলে বিভাগ প্রদ্ধতির রেজাল্ট আর গ্রেডিং প্রদ্ধতির রেজাল্টে বড় অসমতা তৈরি হয়। আর এটা বিশেষত তৈরি হয় ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। কারণ ২০০৪ সালের পর থেকে অনেকটা সমতা আনা হয়েছে। যেমন এক. ৮০-১০০ নম্বরে (A+) গ্রেড ছিলো এখানে ৭০ নম্বরে আরো একটি (-A) গ্রেড যুক্ত করা হয়েছে, দুই. চতুর্থ বিষয়ের নম্বর আগে যুক্ত হতো না পরে যুক্ত করা হয়েছে।
গ্রেডিং পদ্ধতিতে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের এস.এস.সি-এইচ.এস.সি ও সমমান পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের স্বীকার
২০০৩ সালের আগে গ্রেড সংখ্যা কম ছিলো। এর ফলে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বারের অপচয় হতো। যেমন ২০০১ সালে এসএসসি গ্রেড পয়েন্ট ছিলো, ৮০-১০০ A+ গ্রেড (গ্রেড পয়েন্ট ৫), ৬০-৭৯ A (গ্রেড পয়েন্ট ৪), ৫১-৫৯ B গ্রেড (গ্রেড পয়েন্ট ৩), ৪১-৫০ C গ্রেড (গ্রেড পয়েন্ট ২), ৩৩-৪০ D গ্রেড (গ্রেড পয়েন্ট ১), ০০-৩২ F গ্রেড (গ্রেড পয়েন্ট ০)। নম্বর অপচয় কিভাবে হয়েছে তা একটু দেখে নেয়া যাক- এ পদ্ধতিতে কোন বিষয়ে ৬০ পেলে A ধরা হয় আবার কোন বিষয়ে ৭৯ পেলেও A ধরা হয়। যেখানে ১ নাম্বারের জন্য ফলাফল এদিক-ওদিক হয়ে যায়। আর এখানেতো অনেক নাম্বারের ব্যবধান। এখানে ১৯ নম্বর মূল্যয়নই হচ্ছে না। বিষয়টি তখন দৃশ্যমান সমস্যা না হলেও এখন বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আর তখন মার্ক জানার সুযোগও ছিলো না যে এখন সমতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী তার মার্ক উল্লেখ করবে। পরবর্তীতে মার্কের অবমূল্যায়ন কমানোর জন্য গ্রেড পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭টি করা হয়। এখানে সংশোধিত গ্রেড পয়েন্টধারীদের সাথে পূর্বের গ্রেড পয়েন্টধারীদের একটা বড় অসমতা রয়ে গেছে।
সনাতন ডিভিশন পদ্ধতিতে প্রথম বিভাগ ছিল ৬০০ মার্ক। এখানে প্রতিটি নম্বর মূল্যায়ন হতো। ৪র্থ বিষয়ের নম্বরও যুক্ত হতো। ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে যারা এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তাদের ৪র্থ বিষয়ের নম্বরও যুক্ত হয়নি, আবার এক গ্রেড থেকে অন্য গ্রেড পর্যন্ত মাঝের অনেক মার্ক অমূল্যয়িত হয়েছে। সুতরাং এখানে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের জিপিএ আর সনাতন ডিভিশন পদ্ধতি এবং বর্তমান জিপিএ এক মনে করার সুযোগ নেই।
২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতিতে যারা এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তাদের রেজাল্টে অতিরিক্ত বিষয় (৪র্থ বিষয়) এর কোন নাম্বার যোগ হতো না। তাঁরা মূল বিষয়গুলোতে যা পেত, তাই তাদের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু এর পরে যারা পরীক্ষা দেয়, তাদের ফলাফল অতরিক্ত বিষয়ের ফলাফলের সাথে সমন্বয় করেই তৈরি করা হয়। সুতরাং, যারা ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে পরীক্ষা দিয়েছে আর যারা এ সময়ের পরে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের ফলাফলের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে এবং বড় একটা অসমতা রয়ে গেছে। এখানে বড় বৈষম্য হলো পদ্ধতিগত ভুলের কারণে একদিকে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আবার তারা যে নম্বর পেয়েছে তাও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। যেমন চাকুরিতে বর্তমানে গড় ৪.০০ চাওয়া হচ্ছে। সেখানে ৪র্থ বিষয়ের নাম্বারও যুক্ত আছে। অথচ ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে যারা এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৫০ পেয়েছেন তাদের ৪র্থ বিষয় নম্বর যোগ করলে বর্তমান ৪.০০ এর বেশী হবে। কিন্তু এটা মূল্যয়িত হচ্ছে না।
২০০১, ২০০২ (মাধ্যমিক) ২০০৩ (উচ্চমাধ্যমিক) সালের জিপিএ পদ্ধতি আর এখনকার পদ্ধতি যে এক নয় এটা সবারই জানা। বিশেষ করে ২০০১ সাল। তারা ছিলো প্রথম ব্যাচ। মাধ্যমিক পরীক্ষার ২ সপ্তাহ আগে জানানো হয় গ্রেডিং সিস্টেমের কথা। প্রথমবারে এ গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হলে ছ্ত্রারা অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। কারণ বুয়েটে আগে চালু হলেও এ পদ্ধতি সাথে মাধ্যমিক ছ্ত্রা-শিক্ষকদের তেমন জানাশুনা ছিলো না, স্টাডিও ছিলো না। হঠাৎ ঘোষণা হওয়ায় জানত না তাদের রেজাল্ট কিভাবে হবে। বা গ্রেডিং সিস্টেমের পুরো পদ্ধতিটা কি। অনেকে পরীক্ষা শুরু হবার অনেক পরে জেনেছে।
এর উপর তেমন কোন ট্রেনিংও হয়নি। ফলে পরীক্ষকরাও ঠিকমত জানত না কিভাবে খাতা দেখা হবে, কিভাবে মার্ক দিতে হবে। শিক্ষকরা জিপিএ পদ্ধতি মার্কিংয়ের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষার্থীরা কোন ডিভিশান পাচ্ছে অনেকটা সে দিকে খেয়াল রেখে মার্ক দিয়েছে, ফলো শিক্ষার্থীরা নাম্বার প্রাপ্তিতে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে অনাকাঙ্খিতভাবে। গ্রেডিং পদ্ধতিটা প্রথম হওয়ায় অনেকটা জটিলতা তৈরি হয়। ফলে ঐ বছর রেজাল্টে বড় ধরণের ধস নামে এবং বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঐ সময়ের ছাত্রছাত্রীরা।
২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে যে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন কারণেই ক্ষতিগ্রস্থের স্বীকার হয় তা এসএসসিতে জিপিএ-৫ ২০০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কয়েকটি ফলাফল নমুনা দেখলেই বুঝা যায়। ২০০১ সাল পাসের হার ছিল ৩৫.২২%, জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী। এবছর ৪ পয়েন্টও পায় হাতেগুণা কয়েকজন ছাত্র। ২০০২ সালের পাসের হার ৪০.৬৬%, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩২৭ জন। ২০০৩ সালে পাসের হার ৩৫.৯১%, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৩৮৯ জন। ২০২৪ সাল পাসের হার ৮৩.০৪%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। এবছর ৪ পয়েন্ট পাওয়া সংখ্যা কত তা এখান থেকে স্পষ্ট ও অনুমেয়। এখানে পশ্ন উঠা স্বাভাবিক গ্রেডিং পদ্ধতির পূর্বে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীরা প্রথম বিভাগ পেলে এবং ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল প্রতিবছর লাখের উপর A+ গ্রেড আর লক্ষ লক্ষ ৪ পয়েন্ট পেলে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা গেল কোথায়? ২০০১ সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় যেখানে মাত্র ৭৬ জন A+ পেয়েছিলো, ২০২৪ সালে এসে সে সংখ্যাটা লাখ ছাড়িয়ে গেছে, পাসের হার ৩৫% থেকে ৮৩% উঠে এসেছে। এই চিত্র থেকে বুঝা যায়, ২০০১, ২০০২, ২০০৩ সালের জিপিএ কতটা কঠিন ছিলো।
চাকুরীর কোয়ালিফিকেশনে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন ও আন্দোলন
সনাতন ধারার ডিভিশন ফলাফলে ৬০% মার্কস পেলে প্রথম বিভাগ ধরা হয়। চাকুরির ক্ষেত্রেও এটাকে স্টান্ডার্ড ধরে নিয়োগ শর্তে প্রথম বিভাগ চাওয়া হয়। কিন্তু গ্রেডিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে চাকুরীর কোয়ালিফিকেশনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পয়েন্ট চাওয়া শুরু করে। ফলে সনাতন বিভাগ পদ্ধতির সঙ্গে গ্রেডিং পদ্ধতির মধ্যে সংকট ও অসমতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের ১ এপ্রিলে সনাতন বিভাগ পদ্ধতির সঙ্গে বর্তমানে প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতির মধ্যে সমতা বিধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সকল ধারায় আগের প্রথম বিভাগকে বর্তমানে জিপিএ ৪ (প্রাপ্ত নম্বর ৭০-৭৯) থেকে ৫ (৮০-১০০) এর সমমান করা হয়। দ্বিতীয় বিভাগকে করা হয় জিপিএ ৩ (৫০-৫৯) থেকে ৩ দশমিক ৫ (৬০-৬৯) পর্যন্ত এবং তৃতীয় বিভাগকে করা হয় জিপিএ এক (৩৩-৩৯) থেকে দুই (৪০-৪৯) এর সমতুল্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও সমতার বিধান করে। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৩ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারের ওই মান প্রমিতকরণ না মেনে এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ১৩ মে ২০০৯ ইং পরীক্ষায় গ্রেডিং ও বিভাগ পদ্ধতির সমতা বিধান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কলেজ) মাইনুদ্দীন খন্দকারকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সরকারী কর্ম কমিশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সদস্য করা হয়।
সনাতন বিভাগ পদ্ধতির সঙ্গে গ্রেডিং পদ্ধতির সমতা আনয়ন
০২ জুন ২০০৯ গঠিত কমিটি প্রস্তাবনার আলোকে সরকার পরীক্ষায় গ্রেডিং ও বিভাগ পদ্ধতির সমতা বিধানে নতুন মাপকাঠি নির্ধারণ করে। সেখানে ২০০১ থেকে ২০০৩ সালের এসএসসি ও সমমান এবং ২০০৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের এবং ২০০৪ থেকে এর পরের শিক্ষার্থীদের জন্য আরেক রকম মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব ধারায় আগের প্রথম বিভাগকে বর্তমানের জিপিএ-৪ বা তদুর্ধ্ব জিপিএর সমমান করা হয়েছে। অর্থাৎ জিপিএ-৫ পর্যন্ত এই বিভাগ ধরা হবে। দ্বিতীয় বিভাগকে করা হয়েছে জিপিএ-৩ বা তদুর্র্ধ্ব কিন্তু জিপিএ-৪’র কম এবং তৃতীয় বিভাগকে করা হয়েছে জিপিএ এক বা তদুর্র্ধ্ব কিন্তু জিপিএ তিন এর কম। তবে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ এর এসএসসি ও সমমান এবং ২০০৩ সালের এইচএইসি ও সমমানের পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম বিভাগকে বর্তমান জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ বা তদুর্ধ্ব জিপিএ এর সমমান করা হয়। দ্বিতীয় বিভাগকে করা হয়েছে জিপিএ ২ দশমিক ৫০ বা তদুর্ধ্ব কিন্তু তিন দশমিক ৫০এর কম জিপিএ এবং তৃতীয় বিভাগকে জিপিএ এক বা তদুর্ধ্ব কিন্তু দুই দশমিক ৫০ এর কম জিপিএর সমতুল্য করা হয়।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজিপিএর ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বা তদুর্ধ্ব নম্বরকে প্রথম বিভাগ, ৪৫ বা তদুর্ধ্ব কিন্তু ৬০ শতাংশের কম নম্বরকে দ্বিতীয় বিভাগ এবং ৩৩ বা ততোধিক কিন্তু ৪৫ শতাংশের কম নম্বরকে তৃতীয় বিভাগের সমমান হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যে স্কেলে (৪ থেকে ৫) সিজিপিএ প্রদান করে তাকে ৮০ শতাংশ এর সমান নম্বর ধরতে বলা হয়। অর্থাৎ কোন শিক্ষার্থী ৪ স্কেলে জিপিএ ৩ পেলে সেটি প্রথম বিভাগের সমান এবং ৫ স্কেলে এই জিপিএ পেলে সেটা হবে দ্বিতীয় বিভাগের সমান।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ এর এসএসসি ও সমমান এবং ২০০৩ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়। সরকার এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাকরির যোগ্যতা নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়।
চাকুরির নিয়োগ কোয়ালিফিকেশনে সরকারের সমতা বিধান কার্যকর হচ্ছে না
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ সহ গুরুত্বপূর্ণ সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থির যোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়া দেয়া হয়, যেগুলো পূরণ সাপেক্ষে একজন প্রার্থী আবেদনের যোগ্যতা লাভ করে। এই ক্রাইটেরিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল। বর্তমানে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম কোয়ালিফিকেশন হিসেবে সনাতনি প্রথম বিভাগ এবং জিপিএ ৪.২৫ কে শর্ত হিসেবে আরোপ করা হয়। আবার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ৪.০০। কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ ৪.০০ কম পেয়ে আবেদনের সুযোগ রাখা হয় নি। কিন্তু সনাতনির ক্ষেত্রে সবজায়গায় প্রথম বিভাগ চাওয়া হয়। অথচ সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জিপিএ ৩.৫০ কে প্রথম বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয় না। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জিপিএ এর ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা না মানার ফলে চরম বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যা দূরীভূত হওয়া সময়ের দাবী।
বৈষম্য উত্তরণে সুপারিশ
সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে সনাতন প্রদ্ধতির ফলাফল এবং প্রচলিত জিপিএ’র সমতা বিধান কার্যকর করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ সকল নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের ক্ষেত্রে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের শিক্ষার্থীদের কোয়ালিফিকেশন শর্ত হিসেবে জিপিএ ৩.৫০ তদুর্ধ্ব (প্রথম বিভাগ), ২.৫০ তদুর্ধ্ব (দ্বিতীয় বিভাগ) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা। কারণ ২০০৯ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে যারা জিপিএ ৩.৫০ পেয়েছে তাদের ফলাফল ধরা হয়েছে সনাতন প্রথম বিভাগ এবং প্রচলিত গ্রেডিংয়ের ২০০৪ সালের পরের জিপিএ ৪.০০ এর সমান। এবং ২.৫০ তদুর্ধ্ব ধরা হয়েছে দ্বিতীয় বিভাগ।
অথবা যেহেতু সনাতন ডিভিশন পদ্ধতিতে প্রথম বিভাগ হলো ৬০০ মার্কে। সেহেতু ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের শিক্ষার্থীদের সর্বমোট নম্বরের সমন্বয় ব্যবস্থার মাধ্যমে সনাতন প্রদ্ধতির বিভাগ ফলাফলে সাথে সমন্বয় করা।
পরিশেষে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে সনাতন ডিভিশন পদ্ধতির সাথে গ্রেডিং পদ্ধতির ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের এস.এস.সি, এইচ.এস.সি ও সমমান ফলাফলের বৈষম্য দূর হবে এবং সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সমতার বিধান কার্যকর হবে এই প্রত্যাশা। লেখক:গবেষক