প্রতিটি সন্তানের জন্য পৃথিবীতে ভরসার কেন্দ্রস্থল হলো তার বাবা। ছোট-বড় সব আবদার পূরণ তো তার হাত ধরেই। আলাদিনের চেরাগের মতো সন্তানের সব বায়না পূরণের পাশাপাশি ভালো-মন্দ দেখাশোনা করা, কখনো কঠোর শাসন, আবার কখনো ¯িœগ্ধ কোমল ভালোবাসায় আগলে রাখেন সন্তানকে। তাই তো প্রতিটি সন্তান গড়ে উঠে তাদের বাবার হাত ধরেই। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বাবা হলো প্রতিটি সন্তানের জন্য রহমতস্বরূপ। নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে এসে সন্তানের জন্য দিবা-রাত্রি অমানুষিক পরিশ্রম করে উপার্জন করা তো বাবার পক্ষেই সম্ভব। তাই তো ইসলামে বাবাকে মর্যাদাও দেয়া হয়েছে অধিক। ইসলামে আপন বাবা ছাড়া অন্য কারো সাথে জন্ম পরিচয় সম্পর্কযুক্ত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রেও বাবাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। এমনকি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, শ্রদ্ধা-ভক্তি বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা বলে ডাকতে বা পরিচয় দিতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দৃঢ় অবস্থানের মাধ্যমেই বুঝা যায়, ইসলাম বাবাকে কতটুকু মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে।
রাসূলুল্লাহ সা: বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন; বাবার অন্তুষ্টিতে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন।’ এ কারণেই ইসলাম বাবা-মায়ের সাথে অন্যায় আচরণকে গুনাহের কাজ বলে বিবেচনা করেছে। পবিত্র কুরআনে অনেকবার বাবাা-মায়ের প্রতি সন্তানের সদ্ব্যবহার করা অসৎ আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ দিয়েছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ বা উভয় যদি জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়। তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৩)
এখানেই শেষ নয়। ইসলাম শুধু বাবাকে সম্মানিত করেই থেমে যায়নি। বাবার পাশাপাশি বাবার বন্ধুদেরও সম্মান দেয়ার কথা বলেছে। মহানবী সা:-এর যুগে এক সাহাবির বাবা মারা যাওয়ার পর রাসূল সা:-এর কাছে এসে জানতে চেয়েছিলেন; পিতার ওপর তার কোনো দায়িত্ব আছে কি-না? তখন আল্লাহর রাসূল তাকে বাবার বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহারের আদেশ করেন। বাবার বন্ধু বাবার জীবনে সুখ-দুঃখের সাথী। তাদের সম্মান জানানো মানে বাবাকে সম্মান জানানো। তাদের ভালোবাসার মধ্যেই পিতার ভালোবাসা। আবু উসাইদ রা: বলেন, একবার আমরা রাসূল সা:-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় বনি সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব আমার ওপর রয়েছে কি? তা কীভাবে করতে হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের জন্য দোয়া করা। তাদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করা, তাদের আত্মীয়স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা। তাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।’ (আবু দাউদ-৩৪৪)
বটবৃক্ষের নিচে যেমন মানুষ বিশ্রাম নেয়। তেমনি আমরা ও আমাদের বাবা নামক বটবৃক্ষের নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকি। তাই আদর্শ সন্তান হিসেবে আমাদের উচিত বাবার সাথে শিষ্টাচার বজায় রাখা ও ইসলামের নির্দেশনার পরিপন্থী না হলে সব আদেশ নিষেধ মান্য করে চলা এবং তার মৃত্যুর পর মাগফিরাত কামনায় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা। পাশাপাশি বাবার সব অঙ্গীকারগুলো পূরণ করা। তার সব আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং সম্মান প্রদর্শন করা। লেখক : শিক্ষার্থী, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, টঙ্গী