শুধু করোনাভাইরাস নয়, যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হলেই আমাদের খাওয়ার রুচি বা মুখের স্বাদ অনেকটা কমে যায়। আবার সেখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কিছুটা সময়েরও প্রয়োজন হয়। অন্য ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসও আক্রমণ করছে শ্বাসযন্ত্রে। আরতাই করোনায় আক্রান্ত হলে চলে যাচ্ছে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি।
বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কোষ ঘ্রাণশক্তিকে সক্রিয় রাখে সেই কোষকেই আক্রমণ করছে করোনাভাইরাস। সেই কোষ তখন অন্য সংক্রমণ রুখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তাদের মূল কাজ থেকে সরে আসতে হচ্ছে। যে কারণে ঘ্রাণকোষগুলো আর কাজ করছে না। কোনও জিনিসের গন্ধ পলেও সেই সংকেত মস্তিষ্ক পর্যন্ত যাচ্ছে না। এখন কারও ঘ্রাণশক্তি আর স্বাদ চলে গেলেই ধরে নেয়া হয় সেই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত। জ্বর বা সর্দি খুব বেশি না থাকলেও আক্রান্ত হবার পাঁচ দিনের মাথায় চলে যাচ্ছে এই স্বাদ আর গন্ধের অনুভূতি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম ‘অ্যানোস্মিয়া’। প্রাথমিক পর্বেই হারিয়ে যাচ্ছে ঘ্রাণশক্তি। প্রায় ১৬ শতাংশের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পরও ফিরছে না ঘ্রাণশক্তি। এমনকী একটি গন্ধের সঙ্গে অন্য গন্ধকে গুলিয়ে ফেলার বিষয়টিও ঘটতে পারে। যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা থাকছে না তাদেরও ক্লান্তি কাটতে আর মুখের স্বাদ ফিরতে বেশ সময় লাগছে। কারণ করোনায় আক্রান্ত হলে খাবারের রুচি থাকে না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি মেনে চলতে পারেন কিছু ঘরোয়া উপায়- আপনার হারানো গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি আনতে সাহায্য করতে পারে রসুন। রসুনের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ এক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। ২ থেকে ৩ কোয়া রসুন পানিতে দিয়ে গরম করুন। একটু ঠান্ডা করে পান করুন। এভাবে দিনে দু’বার খান। এতে ঘ্রাণকোষ ঠিকমতো কাজ করবে আর আল্প দিনের মধ্যে স্বাদও ফিরবে।
ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হলো লেবু। এর গন্ধও সতেজ অনুভূতি দেয়। ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আছে লেবুর। বন্ধ নাক খোলা, সর্দি কফ দূর করতে লেবু বেশ কার্যকরী। করোনা আক্রান্তরা প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবু আর মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। পুদিনার সুন্দর গন্ধ মন ও শরীরকে সতেজ রাখে, স্নায়ুকে শান্ত রাখে। এটি স্বাদ ফেরাতেও সাহায্য করে। চা তৈরির সময় পানির মধ্যে চা পাতার সঙ্গে কিছু পুদিনা পাতাও দিয়ে দিন। এতে স্বাদ, গন্ধ দুটোই ফিরবে।
স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি ফেরাতে ভাপ নিন। একটি হাঁড়ি বা বড় মুখের কোনো পাত্রে পানি গরম করতে দিন। পানি ফুটলে গ্যাস বন্ধ করে মাথা গামছা দিয়ে ঢেকে ভাপ নিন। মুখ খুলে ভালোভাবে শ্বাস নিয়ে নাক দিয়ে ছাড়ুন। এভাবে বেশ কয়েকবার করুন। তাতে যেসব ব্লকেজ আছে সব খুলে যাবে সেই সঙ্গে ভালো করে শ্বাসও নিতে পারবেন। জমে থাকা কফ, সর্দি দূর হলেই ফিরে আসবে গন্ধ। পানি পানের সময় চেষ্টা করুন হালকা গরম পানি পান করতে। শরীর সহ্য করতে পারে এমন পানি পান করুন। অন্তত হালকা গরম পানি পান করতে হবে।