বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্প্রতি কলকাতার একটি কালীপূজার ম-পে আসাকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে মুখ খুললেন ওই পূজার প্রধান উদ্যোক্তা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পরেশ পাল। পরেশবাবু বাংলা ট্রিবিউনকে এদিন পরিষ্কার জানিয়েছেন, সাকিব মোটেই তাদের পূজার উদ্বোধন করেননি। শুধু উদ্বোধনের পর মঞ্চে উঠে দর্শকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন ও মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন।
কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলে ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের তরফে গত সাতষট্টি বছর ধরে যে কালীপূজা হয়ে আসছে, সেখানে গত সপ্তাহের শেষে সাকিবের যাওয়া নিয়েই এই বিতর্কের শুরু। সাকিব বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পর সিলেটের এক তরুণ ফেসবুক লাইভে এসে ‘কালীপূজা উদ্বোধন করার অপরাধে’ তাকে প্রাণে মারার হুমকি দেন। এরপর সাকিব নিজেও সোশ্যাল মিডিয়াতে এসে গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পুলিশ মহসিন তালুকদার নামে হুমকিদাতা ওই যুবককে গ্রেফতারও করেছে।
এই পটভূমিতেই কলকাতার রাজনীতিবিদ পরেশ পাল বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করলেন, ‘এই বিতর্ক সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত। কারণ সাকিব আল হাসান পুজোর উদ্বোধনই করেননি।’
পরেশবাবুর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথোপকথনের সংক্ষিপ্তসার বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: শুনেছেন বোধহয়, আপনাদের পূজা ঘুরে যাওয়ার পর সাকিবকে বাংলাদেশে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে?
পরেশ পাল: হ্যাঁ, শুনেছি। সাকিব খুব ভালো ছেলে, ওকে এরকম একটা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে জেনে আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে। অথচ আমাদের এত বছরের পুরনো কালীপুজো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক চমৎকার উদাহরণ। আমাদের বেলেঘাটা ও তার বাইরে থেকেও অসংখ্য মুসলিম পরিবার এই পুজোতে যোগ দেন এবং এই আনন্দে শামিল হতে আসেন। সেখানে আসার জন্য সাকিব আল হাসানের মতো তারকাকে বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি নিশ্চিত যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই ওকে অযথা আক্রমণ করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: কিন্তু উনি কি এবার আপনাদের কালীপূজা উদ্বোধন করেছিলেন?
পরেশ পাল: দেখুন, এই ব্যাপারটা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই। সাকিব মোটেও আমাদের পুজো উদ্বোধন করেননি। এমনকি ওনাকে আমরা পুজো উদ্বোধন করার জন্য আমন্ত্রণও জানাইনি। উনি কলকাতায় বেড়াতে আসছেন শুনে আমরা চেয়েছিলাম আমাদের পুজোটা উনি একবার ঘুরে যান। শুধু সেই জন্য অতিথি হিসেবে তাকে আমাদের মাঝখানে পেতে চেয়েছিলাম।
তাহলে সাকিব আমাদের এখানে কী করেছেন? উনি উদ্বোধনের পর আমাদের মঞ্চে উঠে দর্শকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন। তার আগে ওনাকে আমরা অতিথির প্রাপ্য সম্মান দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে পূজো প্রাঙ্গণে নিয়ে এসেছিলাম। তিনি মঞ্চে উঠে মোমবাতিও প্রজ্জ্বলন করেছেন – এবং পুরোটাই করেছেন মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্বের শর্তাবলী বজায় রেখে। ব্যাস এইটুকুই, এটা নিয়ে অযথা কেন বিতর্ক সেটাই আমার মাথায় ঢুকছে না।
প্রশ্ন: এই বিতর্কের পর কোনও মুসলিম সেলিব্রিটিকে পূজায় আমন্ত্রণ জানানোর কথা কি আদৌ ভাববেন?
পরেশ পাল: কেন ভাববো না? এই সব হুমকি-ধামকিতে ভয় পাওয়ার বান্দা আমি নই। দেখুন, আমরা একশো ভাগ সেকুলার লোক, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টাকে কীভাবে ঠান্ডা করতে হয় সেটা এত বছর রাজনীতিতে থাকার সুবাদে খুব ভালোই জানি। এই তো গতকালই আমাদের পূজো প্রাঙ্গণে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষকে আমরা পাত পেড়ে খাওয়ালাম। তার মধ্যে কত মুসলিম ছিলেন ভাবতেও পারবেন না। গত বছরও কোরবানির ঈদের সময় ঢাকায় গিয়ে মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে আমি নিজে গরু কিনতে গেছিলাম, ফলে সব ধর্মের আচার-বিচারের প্রতিই আমার সম্মান আছে। আমাদের পুজোয় মুসলিমদের জন্য, তা তিনি তারকাই হোন বা সাধারণ মানুষ, সব সময় অবারিত দ্বার থাকবে!