ডেভিল হান্টে গ্রেফতার-৬৫, প্রায় ছয়শ জনকে আসামী করে মামলা
দেশজুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্ট এর অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানায় ৪০জন ও মহানগরের ৮টি থানায় ২৫জন সহ ৬৫জন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী আটক হয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ছয়শ জনকে আসামী থানায় মামলা হয়েছে। আদালতে নেয়ার পর প্রিজন ভ্যানে উঠানোর সময় আসামীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। রোববার (৯ফেব্রুয়ারী) গাজীপুরে এসব ঘটনা ঘটে। গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক ও গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক ৬৫ আসামী গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত (দুপুর ১টা) ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা বিভিন্ন ভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানায় মোট ২৫জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক। তিনি বলেছেন অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান রয়েছে। গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ওসি মো: সিদ্দিক হোসেন জানান, মোজাম্মেল হকের বাড়ির ঘটনায় ২৩৯ জনকে শনাক্ত করে অজ্ঞাত নামা২/৩ শ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার বাদী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের আহবায়ক আব্দুল্লাহ মহিন বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামী সাবেক মক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের নিকটাত্বীয় জনৈক আমজাদ মোল্লাকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। এদিকে ডেভিল হান্টে গ্রেফতারদের গাজীপুর আদালতে নেয়ার পর প্রিজন থেকে নামা শুরু হয়। এসময় সাংবাদিকেরা ফুটেজ নিতে গেলে আসামীরা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। এতে জিটিভির গাজীপুর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আনন্দ টিভির জসিম উদ্দিন আহত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাস্থল ধীরাশ্রম এলাকায় গ্রেফতারের আতঙ্কে অনেক বাড়িতেই মানুষ নেই। দক্ষিনখান গ্রামের চায়ের স্টল, ছোট ছোট বাজারেও মানুষের কোলাহল কমে গেছে। সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িওে চারপাশে বেশ কয়কটি মসজিদে গিয়ে জানা যায়, মসজিদের মাইকে ঘোাষনা দেয়ার কারণে গ্রেফতারের ভয়ে মুসল্লিও কমে গেছে।
কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ:
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্র এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা হয়। এ ছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। এর প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পতিত সরকার ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীরা জানান, যে পর্যন্ত পতিত সরকার ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার করা না হবে সে পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, গাজীপুরে আন্দোলনকারীদের হামলা ও গুলি করার প্রতিবাদে রবিবার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছেন। গত ৭(ফেব্রুয়ারী) রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গ্রামের বাড়ি ধীরাশ্রম এলাকার দক্ষিনখান গ্রামে একাধিক মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিলে স্থানীয় লোকজন লোক জড়ো হয়। এসময় স্থানীয় লোকদের আক্রমনে ১৫ ছাত্র আহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুর রাজবাড়ি মাঠে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হলে ওই সভায় বৈষম্য বিরোধী কেন্দ্রিয় নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত হন। এই দুই কেন্দ্রিয় নেতা যাওয়ার পর প্রতিবাদ সভা চলমান অবস্থায় গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সামনে একটি অজ্ঞাত মোটারসাইকেল থেকে গুলি করলে একজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র গুরুতর আহত হন। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই নিয়ে একই ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪জন ভর্তি রয়েছেন। ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ ১৬জনকে আটক করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্রে করে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রনালয় গাজীপুর সহ সারাদেশে অপারেশন ডিভেল হান্ট পরিচালনার ঘোষণা দেন। শনিবার রাত থেকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট ৮১ জন গ্রেফতার হলো। বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। আর ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় নতুন কোন ঘটনা ও গ্রেফতারের আতঙ্কে গাজীপুরের সর্বত্র থম থমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজকে ইতোমধ্যে চন্দ্রা, মৌচাক, কোনাবাড়ি সহ বেশ কিছু জায়গায় প্রতিবাদ সভা করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলণের স্থানীয় ইউনিটগুলো।