সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

উন্নয়নের ছোঁয়াতে বদলে গেছে ত্রিপুরা পল্লী নতুন ঘর পেয়ে গৃহহীন ৪পরিবারের মুখে হাসি

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

উন্নয়নের ছোঁয়াতে বদলে গেছে ত্রিপুরা পল্লীর সোনাই পাড়া। পিছিয়ে নেই মোনাই ত্রিপুরা পল্লীও। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দূর্যোগ সহনীয় বাসস্থান উপহার ত্রিপুরা জনগোষ্ঠিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১ নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামে বসবাস করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ত্রিপুরা অধিবাসী। এ ইউনিয়নের সোনাই ত্রিপুরা পল্লীতে ৫০ পরিবারের বসবাস। নানামুখী সমস্যা ও অনাদরে অবহেলায় বসবাসরত ত্রিপুরা পল্লীবাসী প্রশাসন, ও সরকারের উদ্যোগের কারণে বর্তমানে অবহেলিত ত্রিপুরা পল্লীবাসী এখন যেন সোনালী দিনের আলোতে জলমল করছেন। শনিবার (২১নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী বাসগৃহ ও উপহার সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সোনাই ত্রিপুরা পল্লীতে ঝুঁকিপূর্ণ অসহায় ৪পরিবারকে ৪টি নতুন ঘর বুঝিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন। এসব ক্ষুদ্র-নি গোষ্ঠি নতুন ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। জানা যায়, স্মরনার্তীত কাল থেকে এসব ত্রিপুরা জন-গোষ্ঠি স্থানীয় বশিরহাটের আশেপাশে বসবাস করেছিল। তাদের নিজস্ব বসভিটা ছিল। এসব ভিটায় তাদের মাথা গোজার ঠাঁই ছিল। কালের আর্বতে তারা সরে গিয়ে পশ্চিমের স্থানীয় পাহাড় টিলায় বসবাস শুরু করেন। অনাদরে অবহেলায় চলে তাদের দিনাতিপাত। আয় উপাজর্নের পদ বলতে ছিল পরের জমিতে শ্রম বিক্রি, বর্গা চাষাবাদ,গবাদী পশু পালন, পাহাড় থেকে বনজ দ্রব্য সংগ্রহ করে বিক্রি করা। এসব কাজে তারা প্রয়োজনীয় পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত ছিল। সমস্যার পাহাড় নিয়ে তাদের দিনাতিপাত চলত। যোগাযোগ সমস্যা,পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, সুপেয় পানিয় জল ও চিকিৎসা সংকট, স্যানিটেশন সমস্যা, পুষ্ঠিহীনতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে অসেচতনা, শিক্ষার ব্যাপারে অভাবের কারণে উদাসিনতা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করার সুযোগ না থাকাসহ নানা সমস্যা মধ্যে তাদের দিনতিপাত ছিল। সোনাই ত্রিপুরা পল্লীর অপেক্ষাকৃত নিচু টিলা ভুমিতে অবস্থান হলেও পল্লীর অধিবাসীরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশে ঝুপড়িতে বসবাস করছিল। তাদের যোগাযোগ সমস্যা ছিল প্রকট। দেশে বিভিন্ন সময় নিবার্চন হয়। অনেক জনপ্রতিনিধি আসছে আর গেছে। কিন্তু এ দুই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির উন্নয়নে যেন কারো মাথা ব্যাথা ছিল না। ২০১৭ সালে বর্ষা মৌসুমে মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের নজর পড়ে এ দুই পল্লীবাসির উপর। এসময় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সেখানে পৌঁছতে সীমাহীন দূভোর্গ পোহাতে হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে। ২০১৮ সালে সোনাই ত্রিপুরা পল্লীতে হাম রোগে কয়েক জন শিশুর একসাথে মৃত্যু হওয়ায় প্রশাসন এ দুই পল্লীর প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করেন। জেলা ও উপজেলার পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র পল্লীর অধিবাসিদের সমস্যা সমধান ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় মনাই ত্রিপুরা পল্লীর যাতায়তের সমস্যা সর্বাগ্রে সমধান করা হয়। এরপর থেকে এ উপজেলার ক্ষুদ্র -নৃগোষ্ঠির দুই পল্লীতে বসবাসকারী অধিবাসীদের সোনালী দিনের সূচনা হতে থাকে। উন্নয়নের প্রথম শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে দুই পল্লীতে বসবাসকারীদের সমস্যা চিহিৃত করে সমধানের জন্য প্রশাসন পরিকল্পনা গ্রহন করেন। পরিকল্পনা অনুসারে এসব পল্লীতে বসবাসকারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুতায়ন, সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ বর্তমান সরকারের নিবার্চনী ইসতেহারে ঘোষিত “আমার গ্রাম, আমার শহর” এর আদলে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির পল্লীর উন্নয়ন কার্যক্রমসহ গৃহহীনদের মধ্যে বাসস্থান প্রদানের উদ্যেগ গ্রহন করা হয়। সে হিসাবে ইতিমধ্যে দুই পল্লীর অধিবাসীদের মধ্যে ১৬টি দূর্যোগ সহনীয় বাসস্থান সরকারি খাস জমিতে নিমার্ণ করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। তাছাড়া শিশুদের বিনোদন ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য ক্রীড়া সাংস্কৃতিক সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। স্থানীয় শিশুদের লেখাপড়া যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুদেরকে শিক্ষা বৃত্তি ব্যবস্থা ও শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়। ধর্মীয় কার্যক্রম পালনের জন্য একটি মন্দির তৈরী করা হয়।এর আগে অবহেলিম এলাকায় সুপেয় পানিয় জল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সরকারি ভাবে করে দেওয়া হয়। প্রথমে সৌর বিদ্যুাতের আলোতে ত্রিপুরা পল্লীর প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুতায়ন করা হলে ও পরবর্তীতে দুই পল্লীতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান করা হয় প্রত্যেক পরিবারে। হাটহাজারী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাটহাজারীতে যোগদানের তিন দিনের মাথায় ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারীদের দূর্ভোগের কথা অবহিত হয়ে পরির্দশনে যান মনাই ত্রিপুরা পাড়ায়। ৫৭টি পরিবারের বসবাস এই মনাই ত্রিপুরা পাড়ায়। পরিদর্শন কালে পার্শ^বর্তী সোনাই ত্রিপুরা পাড়ায় এর আগে হামরোগে কয়েকজন শিশু মৃত্যুর ঘটনার কথা অবহিত হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এব্যাপারে বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা গ্রহন করার নিদের্শনা প্রদান করলে তিনি এব্যাপারে সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় আশ্বাস প্রদান করেন। সে অনুসারে দুই বছরের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির উন্নয়নে কি কাজ করতে হবে করনীয় নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, বাসস্থান ,সুপেয় পানীয় জল, শিক্ষা, স্যানেটেশন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারি সহায়তা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি ও শিক্ষা সামগ্রী, স্কুলের ইউনিফর্ম,ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক উপকরণ প্রদানের করণীয় নির্ধারণ করা হয়। তাছাড়া শতভাগ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনয়ন, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, ভিজিডি ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য তালিকা প্রণয়নের সময় মনাই ত্রিপুরা পাড়ার নাগরিকদের অন্তর্ভোক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা প্রদান। গত কয়েকমাস আগে মনাই ত্রিপুরা পাড়ার বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসের ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী ১২পরিবারকে সমতলের সরকারি খাস জায়গায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর সরকারের পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হয়েছিল। সোনাই ত্রিপুরাতে আরো ৪টি ঘর হস্তান্তর করেছে আজ। মোট ১৬ টি ঘর সোনাই ও মোনাই ত্রিপুরাবাসীর সঠিক প্রাপ্ত পরিবারদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোনাই ত্রিপুরা পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দারা বলেন, বর্তমান সরকারের নিবার্চনী ইসতেহারে আমার শহর আমার গ্রাম নামে যে কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন বর্তমানে হাটহাজারীর সোনাই মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণার যথাযত বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এসব ত্রিপুরা পল্লীর এখন আর অবহেলিত নেই। মানুষের মৌলিক চাহিদার অত্যাবশকীয় উপদান গুলো পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন হওযায় আমরা এলাকাবাসী আগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে যেতে পেরেছি। এঘর গুলো উপহার হিসেবে বুঝিয়ে দেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন। ইউপি সদস্য মো.সিরাজুল হকের সঞ্চালনায় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম শাহ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, হাটহাজারী উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এড.মোহাম্মদ আলী, ইউপি চেয়ারমান মো.ইদ্রিস মিয়া তালুদার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.নুরুল আলম, সাংবাদিক কেশব কুমার বড়ুয়া প্রমুখ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com