বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা মুখে মাস্ক ব্যবহার না করায় গুনতে হচ্ছে জরিমানা।
গতকাল রোববার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সৈকতের লাবণী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে ৪২ পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ৬ হাজার ২০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম।
সিরাজুল ইসলাম নামে এক পর্যটক বলেন, ‘মাস্ক তো ব্যবহার করছি। এখন সৈকতের পানিতে নেমেছিলাম; তাই বউয়ের হাতে রেখে গিয়েছি।’ আরেক পর্যটক সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘মাস্ক আছে পকেটে। শুধু ছবি তোলার জন্য মাস্কটা খুলে রেখেছিলাম। ছবি তোলার পর আবারও মাস্ক পড়ব।’ সৈকতের ফটোগ্রাফার রহিম বলেন, ‘মাস্ক আছে; ক্যামেরার ব্যাগে। যখন পর্যটকের ছবি তুলবো তখনই মুখে মাস্ক ব্যবহার করব।’
এদিকে, সৈকত শহর কক্সবাজারে করোনার সংক্রমণ রোধে পর্যটকদের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সৈকতের সবকটি পয়েন্টে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম জানান, পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিনই ঢল নামছে হাজার হাজার পর্যটকের। হোটেল, মোটেল, বার্মিজ দোকান, বালিয়াড়ি ও সৈকতের ভিড় করছেন পর্যটকরা। কিন্তু কেউ মানছেন না করোনার সতর্কতা। সৈকতে প্রবেশে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও তাও মানছেন না পর্যটকরা। মাস্ক ব্যবহার নিয়ে নানা অজুহাত পর্যটকসহ ব্যবসায়ীদের। এসব কারণে গতকাল সকাল ১০টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া কলাতলী পয়েন্টে ইমরান জাহিদ ও লাবণী পয়েন্টে সাদিয়া সুলতানা অভিযানে নামেন। অভিযানে সুগন্ধা পয়েন্টে ৭টি, কলাতলী পয়েন্টে ১৭টি ও লাবণী পয়েন্টে ১৮টি মামলা করা হয়। এসময় জেলা পুলিশের ৩টি টিম সঙ্গে ছিলো প্রশাসনের অভিযানের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় সৈকত এলাকার চিত্র। জরিমানার ভয়ে ধুম পড়ে মাস্ক কেনার।
মাস্ক বিক্রেতা তৌহিদ বলেন, ‘সৈকতে ম্যাজিস্ট্রেট না আসার আগে কারো মুখে মাস্ক ছিল না। তখন আমাদের কাছ থেকে কেউ মাস্ক কিনেননি। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এসে অভিযান শুরুর করার পর মাত্র ৫ মিনিটে ১০০টি মাস্ক বিক্রি করেছি ১০ টাকা করে। আরেক মাস্ক বিক্রেতা সৈয়দ আলম বলেন, ‘এক ঘণ্টার মধ্যে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ৫ হাজারের বেশি মাস্ক বিক্রি হয়েছে। যা সম্ভব হয়েছে প্রশাসনের অভিযানের কারণে। অভিযানের ফলে পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’ কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আল আমিন পারভেজ জানান, মাস্ক ব্যবহার না করায় সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে ১৭টি, সুগন্ধা পয়েন্টে ৭টি ও লাবণী পয়েন্টে ১৮টি মামলা করা হয়েছে। যেখানে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬ হাজার ২০টাকা। তিনি আরও জানান, মাস্ক ব্যবহার না করায় নামমাত্র পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। মূল উদ্দেশ্যে হল পর্যটকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা। এখন পর্যটন মৌসুম চলছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকের আগমন হচ্ছে সৈকতে। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরি করতেই এই অভিযান। টিকা না আসা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।- রাইজিংবিডি.কম