ভোলার চরফ্যাশনের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে মেঘনা,তেতুলিয়া ও বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী বেষ্টিত বঙ্গপোসারের কোল ঘেঁষে অবস্থিত দ্বিতীয় সুন্দরবন ক্ষ্যাত পর্যটন শিল্পের বিকাশে এক অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপ কুকরি মুকরি ইউনিয়ন। চরফ্যাশন উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরি মুকরি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগযোগের লক্ষ্যে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর সংযোগ চ্যানেল বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীর উপর ক্রস বাঁধ বা ক্রস ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধারেই মূল ভূ-খন্ডে যুক্ত হবে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপ। জানা যায়, কুকরি-মুকরি,চর-মানিকা এবং চর মন্তাজসহ উপকূলিয় এলাকার একাধিক চরাঞ্চলের মানুষ মূল ভূ-খন্ড জেলা সদরসহ চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় নদীর পাড়ে অপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌ-পথে আসা যাওয়া করতে হয়। ফলে এসব অঞ্চলের মানুষকে ভোগান্তী পোহাতে হয় নানান রকমের। এছাড়াও সন্ধ্যার পরেই মূল শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একমাত্র ভরসা নৌকা, ট্রলার ও স্টিমার বন্ধ থাকায়। যার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশাজীবিসহ চিকিৎসা প্রার্থী অসুস্থ রোগীদের। উপজেলার বিচ্ছিন্ন এসব চরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লাখ,লাখ মানুষের বসবাস। ব্যবসা বনিজ্য ও মৎস্য উৎপাদন, পশুপালন, এবং কৃষি ও চাষাবাদে জীবন জীবিকার সন্ধ্যানে চর-চরাঞ্চলে বসবাস করছে এসব মানুষ। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠী চারপাশে বেষ্টিত নদী ও সাগর জলে দ্বীপ বন্ধীর মতোই জীবন অতিবাহিত করছে। মূল ভূ-খন্ড জেলা ও উপজেলা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এসব চরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী শিক্ষা,চিকিৎসা,শিল্প, ও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এছাড়াও নাগরিক সুবিধা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং পিছিয়ে পড়া এসব চরাঞ্চলীয় জনগণ বর্তমান আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে জাতীয় উন্নয়নে অংশ নিতেও ব্যার্থ হচ্ছে। উপজেলার সাথে সরাসরি স্থল যোগাযোগ না থাকায় নৌকা,ট্রলার ও ব্যয়বহুল স্পীডবোটে যাতায়তেও অনেক বেগ পেতে হয় এসব ক্ষেত খামারী মানুষকে। এছাড়াও পণ্য সামগ্রী পরিবহনসহ অসুস্থ্য রোগীদের ঠিক সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌছাতে অসুবিধা হয় শীত মৌসুমে নদী নাব্যতা সৃষ্টি ও অসংখ্য ডুবোচরের কারণে। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি চরাঞ্চলগুলোর সাথে মূল ভূ-খন্ড জেলা ও উপজেলা সদরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরীর মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে দেশের জাতীয় উন্নয়নে তাদের অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করা। যার প্রেক্ষিতে উক্ত এলাকায় প্রকল্প প্রনয়নে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। আর এ কমিটি ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন এ চরাঞ্চলগুলো পরিদর্শন করেছেন। এবং বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী ও গভিরতাসহ ওই চরের সাথে দৈর্ঘ ও প্রশস্থ জরিপের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন এসব এলাকার সাথে উপজেলার চর মানিকা ইউনিয়নের মূল ভূ-খন্ডে ক্রসড্যাম নির্মাণ পরিকল্পনাসহ চর কুকুরি-মুকরিকে ঘিরে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২।বিচ্ছিন্ন চর-কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন ও উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ক্রসবাঁধ বা ক্রস ড্যামটি নির্মাণ হলে যোগাযোগ রক্ষায় শিল্প,সংস্কৃতি,চিকিৎসা,নদী ভাঙ্গণ হ্রাস সহ কৃষি,বনায়ন ও হাজার,হাজার হেক্টর ভূমি পুনরুদ্ধার হবে বলে মনে করেন স্থানিয়রা। ফলে অবহেলিত এসব অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা,স্বাস্থ্য,কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা বনিজ্য ও কুটির শিল্প, মৎস্য আহোরণ এবং উৎপাদনে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পাড়বে। এছাড়াও এ ক্রসড্যামের মাধ্যমে বিশাল অংশের ভূমি পুনোরুদ্ধারে আবাসন সমস্যা লাঘোবে জনবসতি স্থাপনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারণে ও অর্থনৈতিক গতিশীলতায় জাতীয় উৎপাদন এবং জাতীয় উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে উপকূলীয় এসব জনগোষ্ঠী।এবিষয়ে চর-কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীর উপরে ক্রসবাঁধ বা ক্রসড্যামটি নির্মিত হলে উপজেলার সাথে দূর্গম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের সময় লাঘোবের পাশাশি অর্থনৈতিকভাবে তারা উন্নত হবে। পাশাপাশি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনখাত কুকরি-মুকরি থেকে সরকারের অনেক রাজস্ব আয় হবে। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ,লাখ মানুষ আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ ভোলা চরফ্যাশন এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ক্রসবাঁধটি নির্মানে দুটি রুপরেখায় বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা করা যায়। যেমন,বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীর দুই মাথায় চর-কুকরি মুকরি ও উপজেলার মানিকা ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগের জন্য দু’টি বাধ দিয়ে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর পানি বুড়াগৌড়াঙ্গ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া যায়। যেখানের কৃত্রিম বিশালাকৃতির জলাশয় থেকেও সরকারের অনেক লাভবান হবে। এছাড়াও ক্রসড্যাম নির্মিত হলে পলি জমে কুকরি-মুকরি ও চর মন্তাজ সরাসরি যুক্ত হবে চরফ্যাশন তথা দ্বীপ ভোলা জেলার সঙ্গে। ফলে পুনোরুদ্ধার হবে বিশাল অংশের হাজার,হাজার হেক্টর জমি। যার মাধ্যমে এ জনপদগুলোর মানুষ আর্থসামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়েই জাতীয় উন্নয়নের অংশিদার হবে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে খুব শীঘ্রই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার পর্যবেক্ষণে আসবেন এবং চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে দুইটি রুপরেখার যেকোনো একটির মাধ্যমেই বিচ্ছিন্ন চরগুলো মুল ভূ-খন্ড ভোলার সাথে সংযুক্ত হবে বলে মনে করি।