সিরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। গত রবিবার ৩ জানুয়ারি এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসিন পেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। সিরাম ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এপি। গত রবিবার সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা এপিকে বলেন, কয়েক মাসের জন্য ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি দেবে না ভারত। ভারতীয়রা যাতে যথাযথভাবে ভ্যাকসিন পায় সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের এক কোটিরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ লোক করোনায় মারা গেছেন। করোনা ভ্যাকসিন বণ্টন পরিকল্পনার শুরুতেই ভারত ৩০ কোটি জনগণকে টিকা দিতে চায়। যার মধ্যে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী পুলিশসহ সামনের সারির যোদ্ধারা।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শঙ্কিত বাংলাদেশের মানুষ। যদিও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তাদের সঙ্গে করা বাংলাদেশের চুক্তির ওপর প্রভাব ফেলবে না । কিন্তু পেঁয়াজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ভরসা পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। হাসনুন রশিদ নামের একজন একটি নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি নিউজের নীচে বক্তব্য করেছেন,‘ আমরা আগে থেকেই ভাবছিলাম ভারত এটাই করবে । ভারতের পঁষঃঁৎব ( কালচার) কি আমরা এখনও শিখতে পারলাম না ? কেন আমরা একটা দেশের উপর নির্ভর করে থাকলাম জানতে চাই । চীন এসে প্রস্তাব দিলো আমরা গায়ে লাগালাম না । সরকারের কি এখনও শিখখা হবেনা?’
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘ভারতে ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করছি, সিরামের সঙ্গে চুক্তি ব্যাহত হবে না এবং চুক্তি অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন পাবো। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ চুক্তিটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। আশা করছি ভারত চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে।’
‘আগে বলেছিলেন জানুয়ারির মধ্যে আমরা সিরামের টিকা পাবো, এখন কবে পাওয়া যেতে পারে’- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নিশ্চিত হলে বলতে পারবো। এ সমস্যাটি নতুন করে তৈরি হয়েছে। গতকালও আমরা নিশ্চিত ছিলাম টিকা পাবো। আজ শুনলাম ভারত সরকার টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’ গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী জানান, ভারতকে ভ্যাকসিন দেওয়া বাবদ টাকা পাঠানোর সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা অর্থাৎ ১২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হবে।
‘পেঁয়াজ নিয়ে ভারত আমাদের যেভাবে নাজেহাল করেছে, টিকা নিয়ে আমরা ভারতের ওপর কীভাবে বিশ্বাস করতে পারি?’ এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর। কাজেই আমরা ভারতের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই।’ ‘এককভাবে ভারতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়ার খেসারত আমরা দিচ্ছি কি না?’ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারপরও আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই। এছাড়াও অন্যান্য দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে।’ কাজেই ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে জানান মন্ত্রী। ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনকার করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার। রবিবার (৩ জানুয়ারি) এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সিরাম ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এপি। রবিবার সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা এপিকে বলেন, কয়েক মাসের জন্য ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি দেবে না ভারত। ভারতীয়রা যাতে যথাযথভাবে ভ্যাকসিন পায় সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞা ভ্যাকসিন কেনার চুক্তিতে প্রভাব ফেলবে না: করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তাদের সঙ্গে করা বাংলাদেশের চুক্তির ওপর প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান।
স্বাস্থ্যসেবা সচিব বলেন, ‘আমি এখনই ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনরাকে ফোন করলাম। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, আমরা যে চুক্তি করেছি, এটার ফিন্যান্সিয়াল কতগুলো ট্রান্সজেকশন, কীভাবে টাকাটা যাবে, কীভাবে ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে! কাজটি হয়েছে জিটুজি বা সরকার টু সরকার। যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার কথা ভারত সরকার বলেছে শুধু কমার্শিয়াল অ্যাকটিভিটিজের ওপর, আমাদেরগুলোর ওপর নয়। কারণ আমাদেরটা সরকার টু সরকার।’ গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতে নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সচিব।
ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটকে আগামী কয়েক মাসের জন্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের রফতানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। চুক্তির আওতায় ভারতের এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা রয়েছে।