শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

ভালুকায় দেড়শতাধিক লাইসেন্সবিহীন করাতকলে বনাঞ্চলের গাছ ধ্বংস করছে!

বিল্লাল হোসেন ভালুকা (ময়মনসিংহ) :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২১

ময়মনসিংহের ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের এক কিলোমিটার দূরত্বের ভেতর উপজেলার বাটাজোর বাজারে ৭টি অবৈধ করাতকলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা করাতকলে চেরাই হচ্ছে অবৈধভাবে বিশাল বিশাল শাল-গজারি ও আকাশমনি গাছের কাঠ। এসব করাতকলের একটি সংঘবদ্ধ গাছ পাচারকারীদল রাতের আধাঁরে অব্যাহতভাবে সরকারি বনের গাছ কেটে নেওয়ার ফলে উজাড় হচ্ছে জাতীয় উদ্যান ও হবিরবাড়ী এলাকার গজারি বনসহ বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভালুকার কাচিনা ইউনিয়নের বাটাজোর বাজার, তামাট বাজার মল্লিকবাড়ী বাজার, মাস্টার বাড়ি, মল্লিকবাড়ির মোড়, ভরাডোবা বাজার, উথুরা সদর বিট আওতাধীন উথুরা, বাজার, চান্দের বাজার ও চায়িমাদী বাজার কৈয়াদী বাজারসহ উপজেলায় প্রায় দেড়শতাধিক লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকল দিনরাত অবাধে চালিয়ে চেরাই করছে গজারি-শাল ও আকাশমনি কাঠ। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবাধে গাছ কাটা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা গেছে, বৃক্ষসম্পদ সংরক্ষণ পর্যটন সুবিধা উন্নয়নের জন্য সরকার বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন ১৯৭৪-এর ২৩(৩) ধারার আওতায় ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর আদেশ বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের পালগাও এলাকায় ৮৫০ একর ভূমির সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে কাদিগর জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করে। এখানে রয়েছে পুরনো বন শাল-গজারি গাছের সবুজের সমারোহ। জাতীয় উদ্যান হিসেবে ওই এলাকাটি চিহ্নিত হওয়ার পর তা সংরক্ষণে সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়। কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে একটি চক্র উদ্যানের গাছ কাটা শুরু করে। চক্রটি উদ্যান এলাকা থেকে গজারি গাছ কেটে ঘোড়ার গাড়ি ও বিভিন্ন যানবাহন করে পার্শ্ববর্তী বাটাজোর বাজার ও আশপাশের করাতকল মালিকদের কাছে পৌঁছে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাদিগড় মৌজার ৩৮৩ নম্বর দাগে তালাব দক্ষিণপাড়া মরাপোড়া ব্রিজের উত্তর ও পশ্চিমের বেশ কয়টি চালা থেকে বিশাল বিশাল-গজারি গাছ কেটে নিয়ে উজাড় করছে এবং এসব ফাঁকা জমি দখল করে বাঁশঝারসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছেন। স্থানীয়রা আরো জানান, ওই দুই ব্যক্তি প্রথমে ওসব চালার বড় বড় গজারী গাছের নিচের অংশের চামড়া তুলে ফেলেন এবং গাছটি মারা গেলে তা কেটে নিয়ে অবৈধ করাতকরে ড়োই করে অন্যত্র বিক্রি করেন। বন আইনে বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকলের স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও কাদিগড় বনাঞ্চল থেকে মাত্র দু’ই কিলোমিটার দূরে কাচিনা বাজার ও আড়াই কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজার এলাকায় ২০টি লাইসেন্সবিহীন করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব করাতকলে উদ্যানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ চেরাই করা হয়। তাছাড়া কাদিগড় বন বিট অফিস থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বাটা জোর বাজারে আতিক মন্ডল, পলাশ তালুকদার, সেলিম তালুকদার, ইমরুল তালুকদার, জাহাঙ্গীর মেম্বার,নয়ন তালুকদার ও পাপনের মালিকনাধীন অবৈধ করাতকল ছাড়াও আরো সাত-আটটি করাতকলে প্রকাশেই চেরাই করা হচ্ছে বনের গাছ। বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কর্মজজ্ঞ চলে বলে একাধিক সূত্র নির্শ্চিত করেছে। তবে বন বিভাগের কর্মকতারা বলেছেন, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। শুধু কাচিনা আর বাটাজোরই নয়, জাতীয় উদ্যানের মাত্র দু’কেলোমিটার দূরে তামাট বাজারে শাহিন মেম্বারের মালিকানাধীন করাতকলসহ তিনটি করাতকলে রাত-দিন বনের গাছ চেরাই করা হয়। ক্রমাগত গাছ কাটার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য ও ধ্বংস হচ্ছে জাতীয় সম্পদ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছু দিন আগেও জাতীয় উদ্যান এলাকায় মেছোবাঘ, লজ্জাবতী বনারসহ কয়েক প্রজাতির প্রণী উন্মক্ত করা হলেও বন উজাড় হওয়ায় এদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বন বিভাগের কর্মকতাদের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে অবৈধ করাতকল মালিক ও কাঠ পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্র। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক করাতকল মালিক জানান, বন বিভাগের কর্মকতাদের যোগসাজশে এমনকি প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে সেলামী দিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর গাছ চেরাই করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, প্রত্র্যাক সমিল মালিকদের ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। তাই এসব চেরাই কাঠ সহজেই ফার্নিচারের দোকানে ব্যবহার করতে পারেন। সূত্র জানায়, কাদিগড় বন এলাকার বাইরে মল্লিবাড়ি মোড় ও বাজার এলাকায় সাতটি, মাষ্টারবাড়ি বাজার, কাশর গড়, জামীদিয়া সীমান্তবর্তী, লালবাজার রোড, ভরাডোবা বাস ষ্টান্ড এলাকায়…….নাম….উথুরা ইউনিয়নের চামাদিয়া বাজার আব্দুস ছামাদ, নূরুল ইসলাম, মালেক মেম্বার, উথুরা বাজারে রিটায়েট প্রাপ্ত রফিক পুলিশ, চান্দের বাজারের আব্দুল গফুর, খলিলের বাজার সংলগ্ন আলী আকবর, শ্রী: শম্ভু নাথ কৈয়াদী বাজারসহ ৮টি, বোর্ড বাজারে এক, পারুলদিয়া বাজারে এক, বিরুনীয়া মোড় ও বাজারে ছয় এবং ভালুকা পৌরসভা সাতসহ ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বেশ কয়েকটি অবৈধ করাতকল রয়েছে। যেগুলো চলে বনের কাঠ কাটার মহোতসব। এসব কাঠ শুধু ফার্নিচারের দোকানেই নয়, এর একটি অংশ স্থানীয় ইটভাটাগুলোয় ব্যবহার করা হয়। উপজেলায় প্রায় ১৭ টি ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোয় কয়েলের পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হয়। আর এসব কাঠের জোগান আসে অবৈধ করাতকল থেকে। এ ব্যাপারে কাদিগড় বিট অফিসার আশরাফুল আলম জানান, সম্প্রতি ময়মনসিংহ র?্যাব ১৪ এর মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবারো অভিযানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন, বনের গাছ কাটা রোধে এরই মধ্যে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। আবারো অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com