পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। এসব পৌরসভায় প্রায় অর্ধেক এলাকায় ইভিএমে এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হবে
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই ভোটের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বলেন, ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। কিছু এলাকায় ইভিএমে ভোট হবে, তাতে মক ভোটিংও হয়েছে। কিছু এলাকায় ব্যালটে ভোট হবে। সেখানেও প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
৬০টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে তিন পদে প্রার্থী ৩২৮৬ জন। মেয়র পদে ২২১, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৪৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী। ১০৮০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৬৫০৮টি। ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। পুরুষ ১১,০৮,৪৩১ এবং নারী ১১,৩১,৮৩১। মেয়র পদে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় মেয়র পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
যেসব পৌরসভায় ভোট: ইভিএমে ভোট: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার, নওগাঁর নজিপুর, রাজশাহীর কাঁকনহাট ও আড়ানী, নাটোরের নলডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ফরিদপুর, মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, বাগেরহাটের মোংলা, মাগুরা সদর, পিরোজপুর সদর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, নরসিংদীর মনোহরদী, নারায়ণগঞ্জের তারাবো, শরীয়তপুর সদর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট, খাগড়াছড়ি সদর ও গাজীপুরের শ্রীপুর।
ব্যালট পেপারে ভোট: চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়ার মিরপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, গাইবান্ধা সদর, দিনাজপুরের বিরামপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, উল্লাপাড়া, সুনামগঞ্জের ছাতক, নাটোরের গোপালপুর, গুরুদাসপুর, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুতে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এই ধাপের পৌর ভোটের তিন সহস্রাধিক প্রার্থী ইতোমধ্যে প্রচার শেষ করেছেন। এর মধ্যে দুয়েকটি জায়গায় সংঘাত-সহিংসতা ঘটলেও তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি বলে মনে করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক। ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ভোটের সংঘাতে একজন নিহত হয়েছেন। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বরাবরের মতো এ ধাপেও মূল লড়াই নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে হলেও সব মিলিয়ে এবার নয়টি দলের প্রার্থী রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, জাসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।
প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বরের ভোট অনেকটা শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপের ভোটকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে কয়েকটি এলাকায়। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া এই দফার ভোটে সংঘাত ছড়িয়েছে। এই ধাপের ভোটেই রয়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা; যেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই নৌকার মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা ইতোমধ্যে নানা বক্তব্যের জন্য সারাদেশেই আলোচিত। এবার পৌরসভাগুলোতে ভোট হচ্ছে চার ধাপে। প্রথম ধাপে গত ২৮ ডিসেম্বর ২৪টি পৌরসভায় ভোট হয়,এর অধিকাংশ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ও চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সার্বিকভাবে পৌর ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরাও মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে তিনজন পুলিশ সদস্য (অস্ত্রসহ), একজন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য) নিয়ে ১১ জন নিয়োজিত থাকছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন পুলিশ সদস্য (অস্ত্রসহ), একজন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য) মিলিয়ে ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। ইসির জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি, পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও মোবাইল টিম টহল দেবে এবং স্ট্রাংকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে।