ভারতের উপহার ২০ লাখ ডোজ টিকা আসছে আজ
ভারত থেকে আসা করোনাভাইরাসের টিকা সংরক্ষণের জন্য তিনটি বিকল্প জায়গা ঠিক করে রেখেছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। আজ বুধবার ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, টিকা রাখার জন্য যে তিন স্থানের কথা সরকার ভাবছে, এর মধ্যে আছে রাজধানীর মহাখালীতে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির নিজস্ব সংরক্ষণাগার এবং তেজগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার। করোনাভাইরাসের টিকা ওয়াক ইন কুলে (ছোট ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ) রাখা হয়। ২৯টি জেলায় ওয়াক ইন কুল আছে। আরও ১৮টি জেলায় টিকা সংরক্ষণের জন্য ওয়াক ইন কুল তৈরি হচ্ছে। আরও বেশি টিকা আসার আগেই এগুলো তৈরি হয়ে যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করছে। জেলা ও উপজেলায় আইএলআর (হিমায়িত বাক্সের মধ্যে টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা) আছে।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, কাল ভারত থেকে যে ২০ লাখ টিকা আোর কথা তা ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশের মানুষকে দিচ্ছে। তারা দ্রুততম সময়ে টিকা দেওয়ার সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড নামে বাজারজাত করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। গত শনিবার থেকে এই টিকা ভারতের মানুষকে দেওয়া শুরু হয়েছে। উপহারের বাইরে সেরামের কাছ থেকে টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরামের মধ্যে চুক্তিও আছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৫০ লাখ টিকা আসার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র গত সোমবার জানিয়েছে, অগ্রাধিকার তালিকা অনুযায়ী শুরুতে আসা টিকা ঢাকা শহরে দিতে চায় সরকার।
মিট দ্য প্রেসে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে তিন শতাধিক টিকাকেন্দ্র হবে। সরকার বিনা মূল্যে টিকা দিচ্ছে, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসা দেবে সরকার। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩২৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৯২২ জনের। করোনায় সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৩ জন।
কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশকে উপহারস্বরূপ ২০ লাখ ডোজ কভিড ভ্যাকসিন দিচ্ছে ভারত সরকার। আজ বুধবার এ টিকা দেশে আসার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে এ ভ্যাকসিন আনার অনুমতিও দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ভারত সরকার উপহার হিসেবে এই ২০ লাখ ডোজ টিকা আমাদের সরবরাহ করছে। এরই মধ্যে এ টিকা আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি আজ বুধবার নাগাদ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছবে। এর আগে গত সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জানান, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই দেশে আসছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা প্রথম ৫০ লাখের চালান। এর আগেই আসতে পারে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া কিছু টিকা। যদিও সেই টিকা কোন ব্র্যান্ডের বা সংখ্যা কত তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় বিশেষ নজরদারি থাকছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ টিকা দেয়ার পর কী হবে, আমরা তা জানি না। আমরা অন্যান্য দেশে দেখেছি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। টিকার বুথগুলো হাসপাতালের কাছে থাকলে ভালো হয়।
জাহিদ মালেক আরো বলেন, চার লাখ মানুষের জন্য ফাইজারের আট লাখ ডোজ আসবে। এ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে কোল্ড চেইন রয়েছে সীমিত। এজন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন রাখার উপযোগী রেফ্রিজারেটর আনা হচ্ছে জাতিসংঘের সহায়তায়। নীতিমালা মেনে প্রাইভেট সেক্টরে যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই ভ্যাকসিন আনতে পারবে। তবে দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক জরুরি চিঠিতে জানানো হয়, বিশেষ বিমানে করে ২০ লাখ টিকা দেশে আসবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ক্রয় চুক্তি হয়েছে এটি তার অন্তর্ভুক্ত নয়। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এগুলো বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দেয়া হবে।
হাইকমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে ২০ লাখ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। যা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি। একটি বিশেষ বিমানে ২০ জানুয়ারি ভারত থেকে ঢাকায় পাঠানো হবে এসব টিকা। এ চালানে মোট ২৯ হাজার ৪০০ ভায়ল থাকবে। যার ওজন ৭৮০ কেজি। প্রতিটি বাক্সে ১২০০ ভায়ল প্যাকেট করা থাকবে। যার প্রতি প্যাকেটের ওজন ৩২ কেজি।