উত্তরের জনপদের ঐতিহাসিক দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন ‘উত্তরা গণভবন’। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের শীর্ষে থাকা রাজধানীর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন এটি। এই স্থাপনার প্রবেশদ্বার ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ। কেননা প্রবেশদ্বারে আছে তৎকালীন ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে আনা বিশেষ মেকানিক্যাল ডাবলডায়াল দুইকাটা ঘড়ি। প্রায় দুইশ বছর ধরে প্রধান ফটকে আছে বিরল এই ঘড়িটি। কিন্তু কালের সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী ঘড়িটি হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। একসময় কয়েক মাইল দূর থেকে শোনা যেত যে ঘণ্টা ধ্বনি, এখন তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ঠিকমতো সময় দিচ্ছে না, বাজে না আর ঘণ্টা ধ্বনি।
ঐতিহাসিক ঘড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অপরদিকে ঘড়ি মেরাতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। উত্তরা গণভবন সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান ফটকের ঘড়িটি চলছে, কিন্তু ঘণ্টা বাজছে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজা মিয়া জানান,উত্তরা গণভবনে অন্যতম আকর্ষণ প্রধান ফটকের মাঝখানের ঘড়িটি অন্যন এক প্রাচীন নিদর্শণ। প্রায় দুইশত বছর নিরলস সময় ও ঘন্টা বাজিয়ে সময় জানান দেওয়া ঘড়িটি গত কয়েক দিন ধরে বাজছে না আর প্রতিঘন্টার ঘন্টা। আগে এই ঘড়ির ঘন্টা ধ্বনি ৩-৪ মাইল দূর থেকে শোনা যেত। এখন তো আর ঠিকমত চলে না বলে জানান তিনি।
স্থানীয় দর্শনার্থী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বাবা-মার মুখে শুনেছি এই ঘড়িটা কয়েকশ’ বছরের পুরনো। কিন্তু দেখতে এসে ঘড়ি দেখেছি, তবে কোনো ঘণ্টা ধ্বনি শুনতে পাইনি।
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক সবিতা রানী জানান, খুবই চমৎকার একটি স্থাপনা উত্তরা গণভবন। তবে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টা ধ্বনি বাজলে আরও ঐতিহাসিক মনে হতো দর্শকদের জন্য।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিমাখা উত্তরা গণভবনের রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি করা উচিৎ না। এখানের সব স্থাপনার সঠিক দেখভাল করা অতিব জরুরি। কারণ, এসব ঐতিহ্য নষ্ট হলে তা আর ফেরানো কঠিন। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, তাই বিষয়গুলো আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। ঐতিহাসিক এ ঘড়ির চালক ফারুক হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, জানামতে উপমহাদেশের একমাত্র ডাবলডায়াল দুইকাটা ঘড়িটি চালাতে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না। একবার চাবি দিলেই ঘড়িটি চলাতে পুরো এক সপ্তাহ আর কোনকিছুর প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, মেকানিক্যাল সিস্টেমের ঘড়িটিতে দুটি চাবি দেয়ার ব্যবস্থা আছে। একটি চাবি সময় ঠিক রাখে, অপর চাবিটি প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টা বাজায়। লোহা, তামার যন্ত্রাংশ এবং একদিকে ৮ মণ ও অপরদিকে ১২ মন ওজনের পাথরের সময় ও ঘণ্টা বাজাতে প্রতি মুহূর্তে কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, মেকানিক্যাল সিস্টেম দীর্ঘদিন চলার কারণে লোহা ও তামার বিভিন্ন পিনিয়াম ক্ষয় হয়ে গেছে। এতে ঘড়িটির দুই অংশের একটি বন্ধ। শুধু সময় ঠিকমতো চলছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ঘণ্টা বাজছে না। স্যারদের নজরে আছে বিষটি। আমরা চেষ্টা করছি, নষ্ট যন্ত্রাংশগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেরামত করতে পারবো। এই বিরল মেকানিক্যাল ঘড়িটির কাজ খুব সুক্ষ হওয়ায় এটি মেরামত করতে সময় লাগছে।
ঐতিহাসিক এ ঘড়ির ঘণ্টা নষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে এটিকে মেরামত করে আগের মতো সচল করতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক। ঐতিহ্যবাহী ঘড়ি মেরামত হয়ে আগের মতো ঘণ্টা ধ্বনিতে মুখর হবে বলে প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও পর্যটকদের।- সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল