অস্ট্রেলিয়ার সরকার জোর করে নতুন আইন চাপিয়ে দিলে সার্চ সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে গুগল। দেশটিতে পাস হতে যাওয়া নতুন আইনের আওতায় সংবাদ মাধ্যমগুলোর কনটেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুগল ও ফেসবুকের মতো অনলাইন জায়ান্টগুলোকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্টটির এ হুঁশিয়ারি বিশ্বজুড়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোর কনটেন্ট ব্যবহার নিয়ে চলমান লড়াইকে আরো জটিল করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স। গুগল সতর্ক করেছে, নতুন আইন প্রয়োগ করা হলে ১ কোটি ৯০ লাখ অস্ট্রেলীয় ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে অনুসন্ধান ও ইউটিউব ব্যবহারে সমস্যার মুখোমুখি হবেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ছাপা পত্রিকার বাজারে বিজ্ঞাপন বাবদ আয় কমেছে ৭৫ শতাংশ। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। এ খাতকে বাঁচাতেই দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় এমন একটি আইন পাসের পথে রয়েছে। যেখানে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুসন্ধানের ফলাফল ও নিউজ ফিডসহ সংবাদ কনটেন্টের জন্য স্থানীয় প্রকাশক ও ব্রডকাস্টারদের অর্থ প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো যদি প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে না পারে, তবে সরকারের মনোনীত ব্যক্তিরা দাম নির্ধারণ করে দেবে। গুগলের অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেল সিলভা দেশটির সিনেট কমিটিকে বলেছে, এ নীতিটি আইনে পরিণত হলে আমাদের অস্থিতিশীল আর্থিক ও ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি তৈরি হবে। সুতরাং অস্ট্রেলিয়ায় গুগল সার্চ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
সিলভা তার মন্তব্যে ইউটিউব সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি। কারণ গত মাসে নীতিটি সংশোধন করা হয়েছে। ফলে ভিডিও পরিষেবাটিতে ছাড় দেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গুগলের এ মন্তব্যের ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সাংবদিকদের বলেছেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এখানে কী করা যাবেÍতা আমাদের পার্লামেন্ট ঠিক করে দেয়। এগুলো মেনে এখানে কাজ করতে চাইলে আপনাকে স্বাগত। তবে আমরা হুমকির বিষয়টি আমলে নিচ্ছি না।
নতুন আইন তদারকি করা অস্ট্রেলীয় প্রতিযোগিতা ও গ্রাহক কমিশনের চেয়ারম্যান রড সিমস বলেন, প্রযুক্তি জায়ান্টটি কী করতে চলেছে, তা আমি বলতে পারব না। তবে আলোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হবে। তারা বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে কথা বলছে, যেখানে তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চাইছে। তবে আমার দৃষ্টিতে এটি কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি নয়। গুগল নীতিটিকে বিস্তৃত বলে অভিহিত করেছে। তাদের ভাষ্যে, কোনো ধরনের সংশোধন ছাড়া সীমিত অনুসন্ধানের টুল সরবরাহ করা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়া থেকে আয়ের পরিমাণ প্রকাশ করে না। তবে গুগলের অন্যতম বড় মুনাফা ও আয় আসে এ অনুসন্ধানের বিজ্ঞাপন থেকে।
এর আগে চলতি সপ্তাহেই বিস্তৃত রাজনৈতিক সমর্থন থাকা অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনগুলো বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, এর পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়ার উচিত একটি স্বেচ্ছাসেবী নীতি অনুসরণ করা। গত মাসে একটি তদন্তে গুগল ও সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক মিডিয়া শিল্পে আধিপত্য ধরে রেখেছে প্রমাণ পাওয়ার পর এ আইন ঘোষণা করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা গণতন্ত্রের জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে মনে করছে দেশটি। সংবাদ কনটেন্ট ব্যবহারের জন্য ফরাসি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পরই গুগলের পক্ষ থেকে পরিষেবা বন্ধের এ হুমকি এল। তিন বছরের এ চুক্তির মেয়াদে সার্চ জায়ান্টটি ফরাসি প্রকাশকদের ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করবে। গত বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রকাশকদের একটি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা কপিরাইট নিয়ে একটি সাধারণ কাঠামোতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটির জাতীয় দৈনিক লে মন্দ ও লে ফিগারোসহ কয়েকটি প্রকাশনার সঙ্গে স্বতন্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।