সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন

ইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতিকে ফের চিঠি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২১

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারো রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার (৩১ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

ইসির সাবেক আইনজীবী শাহদীন মালিক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ৪২ জন নাগরিকের পক্ষ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযােগের তদন্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রীম জুডিসিয়াল গঠন করার আবেদন জানিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পরবর্তীতে ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করার লক্ষ্যে উপরিউক্ত আবেদনের সংযুক্তি হিসেবে আরেকটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্ধ করা অর্থ সম্পর্কিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযােগ নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনের সাত পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের কপি সংযোজন করা হয়। একই বিষয়ে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দফতর কর্তৃক উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনের কপিও সংযোজন করা হয়।
এরআগে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ রাষ্ট্রপতির কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অসদাচারনের’ অভিযোগ করেছিলেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ এনেছেন তারা। প্রতিক্রিয়ায় ইসি বলছে তারা আইনের বাইরে কিছু করেনি। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অসদাচারনের’ অভিযোগ করেছেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ এনেছেন তারা। প্রতিক্রিয়ায় ইসি বলছে তারা আইনের বাইরে কিছু করেনি।
৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতিকে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের অনুরোধ করেছিলেন তারা। পাশাপাশি অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকারও অনুরোধ করা হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তারা আইনের মধ্যেই দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে এখন রাষ্ট্রপতিই সিদ্ধান্ত নিবেন। এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই প্রতিবেদনের অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো:
আশা করছি, গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তারা দোষী হবেন: শাহদীন মালিক
‘অভিশংসনযোগ্য অপরাধ’ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের অভিযোগের বিষয় তুলে ধরেছেন শাহদীন মালিকসহ কয়েকজন। পরে ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘আমরা সবাই মনে করেছি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নির্বাচন কমিশন যেসব কার্যকলাপ করেছে, সেগুলো গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের। দুদক বা পুলিশ এটা করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দিতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে অভিযোগ জানিয়েছি। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা আশা করছি, গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তারা দোষী হবেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের অপসারণ করবেন। ’’
গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এম হাফিজউদ্দিন খান, ড. আকবর আলী খান, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, ড. হামিদা হোসেন, আলী ইমাম মজুমদার, খুশী কবির, অধ্যাপক পারভীন হাসান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. আহসান মনসুর, স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, শামসুল হুদা, অধ্যাপক সি. আর আবরার, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ ৪২ জন স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচারণে লিপ্ত হয়েছেন। কমিশনের সদস্যগণ একদিকে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ। একইভাবে তারা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন করে গুরুতর অসদাচরণ করে চলেছেন। ‘‘আমরা আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মসহ কমিশনের গুরুতর অসদাচরণের অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে আপনার সদয় অবগতির জন্য চিহ্নিত করছি। ’’যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে: অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে দুই কোটি টাকার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম। নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চার কোটি আট লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম।নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম। এছাড়া ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম এবং ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ), খুলনা, গাজীপুর, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারীরা যা বলছেন
সকলের জবাবদিহিতা থাকা উচিত: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এতদিন পরে কেন এই অভিযোগ সামনে আনলেন, জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবিধানিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাইলেই অভিযোগ করা যায় না। আমরা যারা এখানে স্বাক্ষর করেছি, তারা বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করি। নিজেরা কিছু কাজ করেছি। পাশাপাশি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়েও কাজ হয়েছে। এই কাজগুলো করতে একটু সময় লেগেছে। ’’
শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘নিয়োগে যে দুর্নীতির কথা আমরা বলেছি, সেটা তো একজন নির্বাচন কমিশনার নিজেই অভিযোগ করেছেন। ফলে এটার তদন্ত হওয়া জরুরি। সাংবিধানিকভাবে একজন কমিশনার দু’টি করে গাড়ি প্রাপ্ত হন। গত জুলাই মাসে তাদের প্রত্যেককে দু’টি করে নতুন গাড়ি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিন জন কমিশনার আগের দু’টি গাড়ির মধ্যে একটি ফেরত দিয়েছেন। অর্থাৎ নতুন দু’টি গাড়ির সঙ্গে তারা আগের একটি রেখে দিয়েছেন। এতে কমিশনের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়েছে। এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পর তারা যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে দেশের মানুষ তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন।
আরেকটি বিষয় হল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১৫টি আসনে শতভাগ ভোট পড়েছে। সাড়ে চারশ’ কেন্দ্রে ৯৫ শতাংশের উপর ভোট পড়েছে, সেখানে নৌকা ছাড়া আর কোন প্রতীকে ভোট পড়েনি। এটা তো হতে পারে না। আমরা কেউ রাজনীতি করি না, কিন্তু বিষয়গুলো আমাদের ভালো লাগেনি। ’’
আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি: রফিকুল ইসলাম
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সচেতন মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রের অভিভাবক রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগটি করেছি। আমরা তো ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখি না। পাশাপাশি দেশের মানুষও জানতে পারল বিষয়টি। এখন রাষ্ট্রপতি যদি গুরুত্ব দেন তাহলে তদন্ত হবে। পাশাপাশি আমাদের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এক ধরনের জনমতও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশনাররা যা ইচ্ছে তাই করে চলতে পারবেন না। আসলে সকলের জবাবদিহিতা থাকা উচিত। ’’
নির্বাচন কমিশন যা বলছে: চিঠির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনরের বক্তব্যের জন্য ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে কমিশনারে রফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন, ফলে রাষ্ট্রপতিই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কী করবেন। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন। ’’ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন হলে আপনাদের কোন আপত্তি আছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি যেটা ভালো বুঝবেন সেটা করবেন। ’’ আপনারা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। ’’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com