প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) ১০১ জন আইনজীবী রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে আবেদন পৌঁছে দেন।
ওই আবেদনে দুর্নীতি এবং গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠনের দাবি জানানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন, রফিকুল ইসলাম তালুকদার রাজা, মির্জা আল মাহমুদ, মনিরুজ্জামান, জুলফিকার আলী জুনু, ব্যারিস্টার রেদোয়ানুল হক ও ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
গত রোববার (৩১ জানুয়ারি) ৪২ জন নাগরিকের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযাগ তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়।
ইসির সাবেক আইনজীবী শাহদীন মালিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ৪২ জন নাগরিকের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযাগের তদন্তের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল গঠনের আবেদন জানিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পরবর্তীতে ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তার লক্ষ্যে আবেদনের সংযুক্তি হিসেবে আরেকটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ সম্পর্কিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনের সাত পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের কপি সংযোজন করা হয়। একই বিষয়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দফতর কর্তৃক উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনের কপিও সংযোজন করা হয়।
ইসির বিরুদ্ধে কেন বার বার চিঠি দিচ্ছেন ৪২জন বিশিষ্ট নাগরিক শিরোমে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো: বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক দ্বিতীয় আরেকটি চিঠি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির কাছে। চার পাতার যে দ্বিতীয় চিঠিটি দিয়েছেন সেখানে একটা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং ৫টি জাতীয় দৈনিকের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিঙ্ক সংযুক্ত করা হয়েছে। ১৭ ই জানুয়ারি দেয়া ঐ চিঠিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অসদাচরণের অভিযোগ এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
চিঠিতে ৪২জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে স্বাক্ষরকারী আইনজীবী শাহদীন মালিক বলছিলেন, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং মহা হিসেব নিরীক্ষক, নির্বাচন কমিশনের আর্থিক দুর্নীতি বিষয়ে মত দিয়েছেন।
শাহদীন মালিক বলছিলেন, তারা পূর্বে যে অভিযোগ করেছিলেন সেগুলো আরো জোরদার করেছে নতুন এই তথ্যগুলো। “নির্বাচন কমিশন যে আর্থিক অনিয়ম করেছে সেই ব্যাপারে আরো নতুন কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির এটাও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আমাদের সাংবিধানিক পদ, মহা হিসাব নিরীক্ষকও এই ট্রেনিং প্রোগ্রামের আর্থিক দিকগুলি বিবেচনা করে আপত্তি দিয়েছেন। একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিতেও এই ট্রেনিং প্রোগ্রামের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়নি”। “অতএব আমরা মনে করেছি এই তথ্য আমাদের পূর্বের অভিযোগকে আরো জোরালো করে। এজন্য আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছি এত অভিযোগ আসছে ,এই অভিযোগের সুচারু তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ব্যাপারটা তাঁর পাঠানো উচিত”।
নতুন করে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করা হলে দুইজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তারা এই চিঠির ব্যাপারে অবগত আছেন কিন্তু এখনই কোন মন্তব্য করতে চান না। এর আগে গত বছর ১৪ই ডিসেম্বর এই ৪২জন নাগরিক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রচারিত আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণ এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।
সেই সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা এক সংবাদ সম্মেলন করে ঐ অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছিলেন যেখানে দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই সেখানে তাদের এই দাবি অযৌক্তিক।
“উনারা তো এই দেশেরই নাগরিক। উনারা এই দেশের আইন সম্পর্কে জানবেন এটাই স্বাভাবিক। আইন না জানাটাও কোন ডিফেন্স না সেটাও প্রচলিত। সেই ক্ষেত্রে আমি বলবো যে তারা যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কথা বলেছেন যেটা এখন এক্সিস্ট করে না। আপিল বিভাগে এটা নিয়ে একটা মামলা পর্যন্ত আছে। সেই ক্ষেত্রে উনাদের দাবীটা কতটা যৌক্তিক ,এটা মনে হয় আমার বলে দিতে হবে না।
বাংলাদেশে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়।তার মধ্যে দুদক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অন্যতম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেই কেন তারা বার বার চিঠি দিচ্ছেন। এই প্রশ্নে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন ” দুদক যদি ঠিকমত কাজ না করে জবাবদিহির ব্যবস্থা যদি থাকে,গণতন্ত্র যদি থাকে, নির্বাচন যদি থাকে,তাহলে দেশে একটা সাংবিধানিক শাসন , আইনের শাসন বহাল থাকে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ না করলে ক্ষতি হবে কিন্তু দেশটাতো রসাতলে যাবে না।” ” কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন করছে ‘তথাকথিত’ তাতে দেশতো রসাতলে যাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র উঠে যাচ্ছে ,আইনের শাসন উঠে যাচ্ছে।” “আমাদের সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা সবচেয়ে আগে চাইবো এই দুই প্রতিষ্ঠান আগে কাজ করুক। এই দুইটা প্রতিষ্ঠান যেহেতু দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে আমরা এদের দিকে বেশি নজর রাখছি”।