মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতা গ্রহণের পর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক বিজয় পাওয়ার পর অং সান সু চি’র দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে তাকে এবং অন্য নেতাদের আটক করেছে সেনাবাহিনী।
একটি বিবৃতিতে মি. বাইডেন বলেছেন, “বাহিনীগুলোর উচিত হবে না জনগণের মতামত বা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার চেষ্টা করা।” দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে গণতন্ত্র শুরু হওয়ার পর প্রায় এক দশক আগে দেশটির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মি. বাইডেন বলছেন, এটা জরুরিভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হবে। ”যেখানেই গণতন্ত্র হামলার মুখে পড়বে, সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াবে,’’ তিনি বলছেন। এই ঘটনায় জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘’সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ দেশটির গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য একটি গুরুতর আঘাত।”
এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অং সান সু চিকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করাকে ‘বে আইনি’ বলে বর্ণনা করেছেন। একই ধরণের নিন্দা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও। যে দেশটি এর আগে মিয়ানমারের ওপর অন্য দেশের হস্তক্ষেপের বরাবর বিরোধিতা করে আসছে, সেই চীন দেশের ‘সব পক্ষকে নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার’ তাগিদ দিয়েছে। তবে কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্স মিয়ানমারের এই অভ্যুত্থানকে তাদের ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলে বর্ণনা করেছে।
মিয়ানমারে যা ঘটেছে: মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী আরও একবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির অধিকাংশ স্থানে এখনও টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দেশটির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গন থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং শহরটির আশেপাশের এলাকাগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। ইয়াঙ্গনে বিবিসি বার্মিজ বিভাগের সংবাদদাতা নিয়েন চান আয়ে জানান, শহরটির আঞ্চলিক পার্লামেন্ট এবং আঞ্চলিক সরকারি অফিসগুলোর দখল নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বেসামরিক কর্মকর্তাদের এসব দপ্তরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এক সময় পরিচিত ছিল বার্মা নামে।দেশটির সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্টেট কাউন্সির অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির কয়েকজন মন্ত্রী এবং রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেনাবাহিনী বলছে, তারা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অংলাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করছে। গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চি-র রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। সেনাবাহিনী বলছেন, নির্বাচনে জালিয়াতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এক বছর যাবত তারা ক্ষমতায় থাকবে।