কৃষি বিজ্ঞানীদের যত ধরনের সহযোগিতা লাগবে সরকার তা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি গবেষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পরামর্শ চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞানীদের জন্য কিছু করা দরকার। এটা কীভাবে করা যায় তার জন্য আপনাদের পরামর্শ চাই। আমি সবকিছু করতে চাই। খাদ্য উৎপাদন যে বাড়ছে এটা গবেষণার ফসল। গবেষণা ছাড়া কোনও উপায় নাই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশিত ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘গবেষণার সঙ্গে যারা জড়িত, এটা দীর্ঘ সময় ধরে করতে হয়। সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও গবেষণা শেষ হয়ে যায় না। তবে গবেষণাটা কীভাবে চালিয়ে যেতে পারেন সেটা ভাবতে হবে। আমি বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে কথা বলেছি, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। কারণ গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পিয়ন-আর্দালিসহ সবাইকে তো আর সেই সুযোগ দেওয়া সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়েছি। আমাদের ইনস্টিটিউটগুলোতে আমরা প্রণোদনা কীভাবে দিতে পারি সেই পরামর্শ চাই। আমি চাচ্ছি আমাদের যারা গবেষক, কৃষি গবেষক তাদের আরও সুযোগ দিতে। যারা গবেষণা করবেন তারা যেন সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তা করতে পারেন সেজন্য সরকার পাশে থাকবে।’ কৃষি অর্থনীতি নির্ভর দেশ হওয়ায় সরকার কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও কৃষি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত আবিষ্কারের বিকল্প নেই। এজন্য গবেষণা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন কৃষিপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত করে নিজেদের বাজার ধরে রাখতে হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বাইরেও রফতানি করতে হবে। এজন্য স্বল্পখরচে বেশি ফলদায়ক পণ্য আবিষ্কার ও চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। এজন্য গবেষণাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কৃষি গবেষকদের সাফল্য এবং গবেষণা আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সফল কৃষক রফিকুল ইসলাম। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সচিব মেসবাউল ইসলাম।
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ূন কবির এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৩ আসামির ১০ বছরের কারাদ- ও কয়েকজনের ৯ বছরসহ বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। রায়ে সর্বনিম্ন সাজা দেয়া হয়েছে চার বছরের। সকালে এ মামলায় জেলহাজতে থাকা ৩৪ জন আসামিকে কারাগার থেকে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো: হুমায়ুন কবীরের আদালতে হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ধর্ষিতা গৃহবধূকে দেখতে যান। তিনি ঢাকায় ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা করা হয়।
এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৭০-৭৫ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনকে সাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম। মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর পর বিগত ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্ট করেন আসামিরা। এরপর গত বছরের ২২ অক্টোবর উচ্চ আদালত থেকে মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য শেষ করার জন্য চিফ জুডিশিয়াল আদালতে পাঠান।