হঠাৎ করেই রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো যেন গরম হয়ে উঠেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগিসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এক লাফে উঠেছে ৪০ টাকায়। পাইকারিতেও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী সফর আলী বলেন, ‘এখন ঢাকার বাজারে দেশি যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তার বড় অংশ আসছে ফরিদপুর থেকে। হঠাৎ করেই ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আর বাড়তি দামে কিনে আনার কারণে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম যে হারে কমেছিল তাতে আমরা ধারণা করছিলাম সামনে আরও কমবে। কিন্তু উল্টো বেড়েছে। গত সপ্তাহে এক পাল্লা পেঁয়াজ ১২৫ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন তা ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমাদের ধারণা পেঁয়াজের দাম আবার কমে যাবে।’ খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, ‘দুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বুধবার আড়তে গিয়ে দেখি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। এখন যে দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে তাতে ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই। আগে কম দামে কিনতে পারায় ৩০ টাকায় বিক্রি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম, তাই দাম বাড়ার কথা না। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহের ঘাটতিও নেই। আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। এরপরও কী কারণে দাম বাড়ল বুঝতে পারছি না।’
এদিকে, পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে নতুন আলুর। খুচরা বাজারে এক কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকায়। কয়েক দফা কমে যা দুদিন আগে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আলুর দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নতুন আলু দুই দিন আগেও ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারে গিয়ে দেখি আলুর দাম কেজিতে তিন টাকা বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন আমরা ১৮ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’ এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আলু এখনও হিমাগারে যাওয়া শুরু হয়নি। বাজারে আলুর সরবরাহেরও কোনো সমস্যা নেই। আড়তে প্রচুর বড় আলু। এরপরও দাম বেড়েছে। আমাদের ধারণা, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে আলুরও দাম বেড়েছে।’ আলু ও পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে বয়লার মুরগি ও ডিমের। গত সপ্তাহে ৮৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে এক লাফে ১০০ টাকা হয়েছে। আর ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। রামপুরার মুরগি ব্যবসায়ী শরিফুল বলেন, ‘মাঝে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কমে গিয়েছিল। যে কারণে দাম কমে ১১৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে কিছুদিন ধরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০ টাকা বিক্রি করেছি এখন ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির দাম পাইকারি বাজারের ওপর নির্ভর করে। পাইকারিতে দাম বাড়লে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হই। কয়েকদিন ধরে পাইকারি বাজারের যে চিত্র দেখছি তাতে সহসা দাম কমার সম্ভাবনা কম।’ ডিমের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, ‘গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম ৮৫ টাকায় বিক্রি করেছি। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন ১০০ টাকা ডজন বিক্রি করছি। পাইকারিতে দাম কমলে আবার কম দামে বিক্রি করব।’ এদিকে, শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহে সবজির দামে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ৩০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। ১০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। হঠাৎ সবজির দাম বাড়লেও গাজর, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো গাজরের কেজি ১৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। তবে লাউয়ের দাম কিছুটা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকার মধ্যে। কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হালিম শেখ বলেন, ‘শিমের সরবরাহ আস্তে আস্তে কমে আসছে। এ কারণে এখন একটু দাম বাড়তি। তবে টমেটো ও গাজরের সরবরাহ বাড়ছে। এ কারণে সবজির দাম এখনও তুলনামূলক কম। কিছুদিন পর সবধরনের সবজির দাম বেড়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি।’ খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা বাড়লেও সবজির এখন যে দাম তাকে বাড়তি বলা যায় না। আমাদের ধারণা, আরও মাসখানেক সবজির এমন দাম থাকবে। তারপর হয়ত বেশীরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে চলে যাবে।’