বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ অপরাহ্ন

যেসব রোগে করোনার টিকা নেওয়া যাবে না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

গণমাধ্যমকর্মী পলাশ মাহবুব বাবা-মাকে করোনার টিকা দেওয়াতে চান। কিন্তু দেড় বছর আগে তার বাবার হার্টে রিং পরানো হয়। তাই পলাশ দ্বিধান্বিত। তিনি জানতে চান, বাবাকে টিকা দেওয়াতে পারবেন কিনা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারাক্রান্ত রোগী যদি কেমোথেরাপি অথবা রেডিওথেরাপি নিয়ে থাকেন, তবে করোনার টিকা নেওয়া যাবে না। আবার বিশেষ কিছু ওষুধ সেবন করছেন এমন গুরুতর রোগীরাও পারবেন না। বাকিদের করোনা টিকা নিতে বাধা নেই।

ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে টিকা সরাসরি কোনও সমস্যা করবে না। তবে যে কোনও ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশনের জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। না থাকলে মাংসপেশীর ভেতর সংক্রমণ হতে পারে। বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটা জানালেন গ্রিনলাইফ মেডিক্যাল কলেজের অ্যান্ডোক্রাইনলোজি অ্যান্ড মেটাবোলিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন।
ডা. তানজিনা বলেন, যে কোনও টিকা নিতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সুগার থাকতে হবে ১০-এর নিচে। মোটকথা, ডায়াবেটিস থাকলে টিকা নিতে নিষেধ নেই। কিন্তু সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
একই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে বা কেমোথেরাপি নেওয়া হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। তাতে টিকা নিলেও শরীরে ঠিকমতো প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হবে না। এ কারণে এসব রোগীদের টিকা নিতে নিষেধ করা হয়। আবার হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন বা কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়া থাকলে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের বিরতিতে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও করোনা বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এসব যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে টিকা নেওয়া যাবে।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা আরও জানালেন, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা প্রকট তাদের টিকা না নেওয়াই ভালো। এ ছাড়া যাদের হাঁপানি বা ফুসফুসজনিত অসুখ রয়েছে তাদেরও নেওয়া ঠিক হবে না। তবে সবক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা জানালেন তিনি।
হার্টে রিং পরানো আছে যাদের তারা টিকা নিতে পারবেন কীনা প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি সব প্যারামিটার ঠিক থাকে, তবে অসুবিধা নেই। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী কিংবা করোনা পজিটিভ থাকা অবস্থায় টিকা নিতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, ‘ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস থাকলে তবে এসব নিয়ন্ত্রণে এনে দ্রুত টিকা নেওয়াটাই বরং মঙ্গল। আমাদের দেশে যদি এসব রোগীদের ডাটাবেজ থাকতো তবে কোমরবিড (একাধিক রোগে ভুগছেন) রোগীদের আগে টিকা দিতাম।’ ‘ক্যান্সারে যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন তারা ছাড়া সবাই টিকা নিতে পারবেন। কারণ, কেমোথেরাপির একটা আলাদা রিএকশন থাকে শরীরে। বাকিদের শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে টিকা দেওয়া যাবে।’ জানান ডা. আলমগীর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রানুযায়ী, ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে করোনার টিকা নিয়েছেন দুই লাখ চার হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪০ হাজার ১৫২ ও নারী ৬৪ হাজার ৩৮৮ জন। সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৩৬৩ জনের মধ্যে। এখন পর্যন্ত টিকা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কোনও সংবাদ নেই। যেসব মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেগুলোর কথাই বলেছেন টিকা গ্রহীতারা। কিছু সময় পর যা সেরেও গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনসহ (সিডিসি) বলছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, ফাইজার, বায়োএনটেক- এসব টিকা দেওয়ার পর টিকা দেওয়ার স্থানে হালকা ব্যথা, ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া, মাথাব্যথা, হালকা জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এসব প্রতিক্রিয়া যে কোনও টিকার বেলাতেই হতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com