জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের অপচেষ্টার প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের অপচেষ্টার প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ শনিবার ঢাকাসহ সকল মহানগরে এবং পরদিন রোববার সকল জেলা সদরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের খেতাব কেড়ে নেয়ার সরকারি রাজনৈতিক অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এই অন্যায়, অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যমূলক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের কোনো এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার নেই বলে জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর ।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, জামুকার এগুলো কাজ না, হু ইজ জামুকা। এদের কে চিনে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, জনগণকে আর হাস্যকর করবেন না। এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আপনি আপনার পিতাকে অসম্মান করছেন।
১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ঘটনার সাথে তৎকালীন উপসেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের তো বিচার হয়েছে। কই কোনো সাক্ষী, কোনো ব্যক্তি কেউ কী বলেছে যে, উনি এই ধরনের হত্যাকা-ে অংশগ্রহণ করেছেন বা এটা করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেউলিয়াত্বের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেছে, জাতিকে দেয়ার কিছুই নেই। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কেলেঙ্কারীর কথা ফাঁস হচ্ছে। জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে নিবদ্ধ করার জন্য আজকে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মতো একজন ব্যক্তি সম্পর্কে এই ধরনের অলিক মিথ্যা তথ্য জাতির কাছে হাজির করেছে। এটা দুঃখজনক।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, কী কারণে হঠাৎ করে জামুকা একটা প্রস্তাব করল আমার বোধগম্য নয়। জামুকা কি? মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটা হচ্ছে মিলিটারি ফোর্স, আরেকটা হলো ফ্রিডম ফাইটার, তিন নাম্বার হলো যুদ্ধের শেষ দিকে বিএলএফ নামে একটা সংগঠন গঠন করা হয়েছিল যার বাংলা মুজিব বাহিনী। আমরা যারা মিলিটারি ফোর্স আমাদের কন্ট্রোল করে কোর নামে একটা সংস্থা আছে- সেন্টার অফিসার্স রেকর্ড অফিস। আমাদের সাথে জামুকার কোনো সম্পর্ক নাই। জামুকা হলো যেমন ফ্রিডম ফাইটার ততকালীন ছাত্র-কৃষক-যুব-শ্রমিক যারা যুদ্ধে গেছেন, ট্রেনিং করেছেন, আমাদের সাথে সহযোগিতা করে যুদ্ধ করেছেন- তাদের ভাতা, তাদের সম্মানী, তাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে অধিক থেকে অধিকতর দেয়া যায় দিস ইজ দ্য জব অব জামুকা। জামুকার কোনো এখতিয়ার নেই আমাদের মিলিটারি অফিসার যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের বিষয়ে কিছু বলা, সিদ্ধান্ত নেয়ার।
তিনি বলেন, জামুকা তাদের নিজস্ব বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং আমাদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী যে কথা বলেছে এটাও তার এখতিয়ার বহির্ভূত। এখন প্রশ্ন দাঁড়াল- বীর উত্তম, বীর শ্রেষ্ঠ, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক- মামা বাড়ির আবদার নাকি না ছেলের বাড়ির মোয়া। যখন চাইবেন মামার বাড়ির হারটা কেড়ে নেবেন। এটা তো আমরা যুদ্ধ করে অর্জন করেছি। জিয়াউর রহমান নিজে যুদ্ধ করেছেন। শাহজাহান ওমর বলেন, দুইটা বাঙালি এই ভারত বর্ষে যুদ্ধ করেছে। একজন হলো ভারতবর্ষের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, আরেকজন হলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কয়েক দিন পরে বলবে, তিনি নাগরিকও না। তাতেও জিয়াউর রহমানের কিছু আসে যায় না, বীর উত্তম নিলেও তার কিছু আসে যায় না জিয়া ইজ জিয়া, তিনি বাংলাদেশের একাত্তরের ৭ কোটি মানুষের অন্তরে গাঁথা, তার অবদান হৃদয়ে গাঁথা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান যে প্রথম সেক্টর কমান্ডার এবং প্রথম ফোর্সেস কমান্ডার ছিলেন- এটা ঐতিহাসিক সত্য। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দেয়ার বৃথা চেষ্টা যারা করছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এ দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে মর্যাদার সাথে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন চিরকাল। জামুকার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান ও অবমাননা।গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতি : মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপ্ত জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। পৃথক বিবৃতিতে তারা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী : জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব প্রদান করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের এই মুহূর্তে এসে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কর্তৃক তা বাতিলের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্বস্তিকর। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতির মধ্যে বিভেদ ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে আরো উৎসাহিত করা হবে, যা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্বস্তিকর এহেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”
ইসলামী ঐক্যজোট : ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল করিম খান, ভাইস চেয়ারম্যান পীরজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমিন, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ আতহারী ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন আনসারী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর একজন মহান বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের চক্রান্ত খুবই দুঃখজনক। রণাঙ্গনের যোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল জাতির ইতিহাসে এক নতুুন কলঙ্ক রচনা হবে।
খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু রাজনৈতিক কারণে একাত্তরে রণাঙ্গনের একজন সাহসী সেনা সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়ার খেতাব বাতিল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অমর্যাদার শামিল। দেশপ্রেমিক জনগণ জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলে এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম : বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানকে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্র প্রদত্ত ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার ফিরে না এলে, তা বুমেরাং হবে। গতকাল এক বিবৃতিতে জমিয়তের সভাপতি সাবেকমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মহাসচিব মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম, যুব জমিয়ত সভাপতি মুফতি রেদওয়ানুল বারী সিরাজী এ মন্তব্য করেন।
লেবার পার্টি : সরকার আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে জনগণের দৃষ্টি আড়াল করতেই স্বাধীনতার মহান ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব প্রত্যাহার করার হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েথছে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার ১২ বছরের সীমাহীন দুর্নীথতি দুঃশাসন ও নগ্ন দলীয়করথণের বাস্তব চিত্র আলজাজিরার প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। এতে সরকার দিশেহারা হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এবং আলজাজিরা ইস্যুকে ধামাচাপা দিতেই শহীদ জিয়ার বীর উত্তম খেতাব প্রত্যাহারের হটকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।
জাগপা : জিয়াউর রহমানকে দেয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব জামুকা কর্তৃক বাতিলের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নিকৃষ্টতম উদাহরণ বলে অভিহিত করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি, ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত। গতকাল এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আজ যারা দলীয় লেজুরবৃত্তি করতে গিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে তার খেতাব বাতিলের কথা বলছেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর শুনেই তারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন।