ইভিএমের গোমর ফাঁস করে দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী ওরফে নয়ন বলেছেন, ইভিএম এমন এক সিস্টেম, নৌকার বাহিরে কেউ ভোট দিলে ধরি হালান যায়। চিটাগাং (চট্টগ্রাম) এক কেন্দ্রে ইভিএমে নৌকা পেয়েছে ২ হাজার ৩০০ ভোট। এক ভোট পান ধানের শীষ। পরের দিন এ ভোট কে দিছে, ওই ওয়ার্ডের নেতারা তারে ধরি হালান। কত নম্বর ভোট নৌকার বাহিরে গেছে, তা ধরি হালা যায়। হরে আংগো ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ-যুবলীগ খবর হাইলে আমরা জানি না।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম একটি মেশিন। একুলে কে কোথায় টিপ দেয়, বুঝা যায়। সুতরাং উল্টাপাল্টা টিপ দিয়ে রাজাকার ও খন্দকার মোশতাক হবেন না। যাঁরা এদিন উল্টাপাল্টা টিপ দিবেন, পরের দিন মেশিন চেক করলে সিসি ক্যামেরার মতো বের করা যায়।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে নুর উদ্দিন আরও বলেন, দলের সিদ্ধান্ত, মেয়র পদে ভোট হবে উন্নয়নের জন্য। আর কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নিরপেক্ষ। তারের মতো সোজা। কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে হবে। আপনাদের এজেন্টদেরকে নৌকার পক্ষে ওপেন ভোট করতে হবে। কেউ যদি অন্য কারো ভোট করে। ভোটের মাঝখান দিয়ে বা গণনার সময় সমস্যা হলে দলীয় সাপোর্ট পাবেন না।
গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর কর্মিসভায় নুর উদ্দিন এসব কথা বলেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর সেকান্দর সফি একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তিনি ২৪ মিনিট ৩ সেকেন্ডের বক্তব্য দেন। ওইদিন তিনি সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের পথসভায় বক্তব্য দিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি) আসনের সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম মেজবাহ উদ্দিন, রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজাদ উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ ও আবদুজ্জাহের সাজু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৪ ফেব্রুয়ারি রামগতি পৌরসভার নির্বাচন। এখানে মেয়র পদে ৬ জন, কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচন ঘিরে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা ও শঙ্কা। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লক্ষ্মীপুর জেলায় এটাই ইভিএমে প্রথম নির্বাচন।
এমন বক্তব্য দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডে সভা করে বক্তব্য দিয়েছি। এমন কথা বলেছি কি না, আমার মনে নেই। রাজনৈতিক মাঠ গরম করার জন্য অনেক সময় মুখে ভুলবশত অনেক কিছুই চলে আসে। রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাহেদ আলী পটু। আর আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন এম মেজবাহ উদ্দিন। তিনি পৌরসভার বর্তমান মেয়র।
বিএনপির প্রার্থী সাহেদ আলী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ডে সভা করে ভোট কারচুপির কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন। ইভিএমে কারচুপি আছে, এটি তাঁর বক্তব্যে প্রমাণিত। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ৯ টি কেন্দ্রের ৫টি ঝুকিপূর্ণ। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, ইভিএমে কে কাকে ভোট দিল, তা চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি কেন এসব কথা বলেছেন, আমি জানি না। তাঁর বক্তব্য আমি শুনিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, আমাদের কাছে প্রতিটি কেন্দ্রেই সমান। কোনরকম হানাহানি ছাড়াই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হবে। ভোট গ্রহণ ও ভোটারদের নিরাপত্তায় কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। কেন্দ্রে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা হতে দেওয়া হবে না।-পূর্ব-পশ্চিম.নিউজ