করোনার মধ্যেও দুঃসাহসী হয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন শেষ করে ফেলেছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস। এই ঝুঁকির মধ্যে গেমস না হলে কী হতো? এক সংগঠক ভেবে-চিন্তে জবাব দিলেন, ‘না হলে অ্যাথলেট-কর্মকর্তারা ঝুঁকিমুক্ত থাকতেন। করোনাহীন সময়ে গেমসটা আরো সুন্দরভাবে আয়োজন করা যেত। প্রত্যেকটি খেলা আরো গোছালো হতো, টাকার সদ্ব্যবহার হতো।’
আরেকজন অভিজ্ঞ সংগঠক বলেন উল্টো কথা, ‘আমি চারটি বাংলাদেশ গেমস দেখেছি। যতই গুছিয়ে করার চেষ্টা হোক, অগোছালো ফেডারেশনগুলোর কারণে কখনো হয়ে ওঠে না। করোনার মধ্যে মানুষ পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছে, আর এখানে খানিকটা বিধি-নিষেধের মধ্যে অ্যাথলেটরা খেলেছে। প্রাপ্তি বেশি নয়, খেলা হয়েছেÍ এটাই বড় কথা।’ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস শুরু হয়ে আজ শেষ দিনে দাঁড়িয়ে। পেছনে ফিরে দেখি, করোনার ভয়-ডর দুপায়ে মাড়িয়ে অসীম সাহসে এগিয়ে গেছে গেমসিট। কেউ কেউ বলেন দুঃসাহস! অনেক ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে, কারণ ৩১টি ডিসিপ্লিনের বেশির ভাগ ফেডারেশনই মানেনি করোনার বিধি-নিষেধ। মানেনি অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশনা, কভিড পরীক্ষা করিয়ে অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার নির্দেশ। অলিম্পিকের মেডিক্যাল কমিটির সদস্যসচিব শফিকুর রহমান বলেন, ‘সব ফেডারেশন নয়, বেশির ভাগ ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটরা কভিড পরীক্ষা করিয়ে না আসায় সব সময় একটা শঙ্কা থেকে গেছে। আমরা যতটা পেরেছি পরীক্ষা করিয়েছি। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে তাপমাত্রা মেপে ও উপসর্গ দেখে বেশ কয়েকটি ডিসিপ্লিনের অ্যাথলেটদের বাদ দিয়েছি। কিছু করার ছিল না আমাদের।’ এই হলো আমাদের ক্রীড়া ফেডারেশনের দায়িত্বজ্ঞান। সব সময় খেলা ও খেলোয়াড়দের প্রতি তাদের আন্তরিকতায় বিশাল ঘাটতি। এমন ক্রীড়াঙ্গনে কোনো কিছু গুছিয়ে করা প্রায় অসম্ভব। কোনো জাতীয় অজুহাতে খেলা না করতে পারলেই তারা বেঁচে যায়।
এমন প্রেক্ষাপটে অ্যাথলেটরা খেলার সুযোগ পেয়েছেন, খেলা হয়েছেÍএটাই বড় কথা। বাংলাদেশ অলিম্পিকের দুঃসাহসী উদ্যোগেই গেমস সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো খেলায় অপ্রত্যাশাতীতভাবে তরুণ তুর্কির সন্ধান মিলেছে। শ্যুটিংয়ের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুও বিস্মিত, ‘সত্যি বললে, আমি কল্পনা করিনি এত তরুণ শ্যুটার খেলতে আসবে বাংলাদেশ গেমসে। তাদের অনেকে ভালো করেছে। তারকাদের সঙ্গে লড়াই করে তারা পদক জিতেছে। এই নতুনদের নিয়েই আমি পরিকল্পনা সাজাব।’ সাইক্লিংসহ কয়েকটি খেলায় নতুনের আগমনী বেজেছে। আবার গেমস অ্যাথলেটিকসের দিকে তাকালে সেই ক্লিশে চেহারা। ছেঁড়া-ফাটা ট্র্যাক, হাতঘড়ি নিয়ে বিচারকদের সারি করে বসে যাওয়াÍএকুশ শতকে দাঁড়িয়ে আরেকবার প্রাগৈতিহাসিক অ্যাথলেটিকসের দৃশ্যায়ন চলছে ঢাকায়! সাঁতারেও অচল ছিল ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড। হাতঘড়িতেই রেকর্ডের ভাঙা-গড়া হয়েছে। সাইক্লিংয়ের রাস্তায় আবার মোটরসাইকেল ঢুকে ভজঘট পাকিয়ে দিয়েছে। এ রকম কিছু না হলে গেমসের শোরগোলও তো বাড়ে না! পারফরম্যান্স দিয়ে শোরগোল তোলার অ্যাথলেট যে নেই!
এর মধ্যেও বাংলাদেশ অলিম্পিক গত ৯ দিন ধরে পারফরমার খুঁজে বেড়িয়েছে, এটাই ইতিবাচক। আজ গেমস মশাল নিভবে, বিদায়ের বিউগল বেজে উঠবে। তার আগের দিন গতকাল কাবাডির পুরুষ বিভাগে স্বর্ণপদক জিতেছে বিজিবি, রানার্স আপ বিমানবাহিনী ২৪-২২ পয়েন্টে হেরেছে। মেয়েদের কাবাডিতে বাংলাদেশ আনসার ১৫-১৪ পয়েন্টে বাংলাদেশ পুলিশকে হারিয়ে সোনা জিতেছে। মহিলা হকিতে নড়াইল জেলা ১-০ গোলে ঝিনাইদহকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। পুরুষ হকিতে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নৌবাহিনীর বিপক্ষে ফাইনাল নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলে ড্র হলে টাইব্রেকারে সেনাবাহিনী জেতে ৪-৩ গোলে। শেষ ইভেন্ট পুরুষ ক্রিকেটের ফাইনাল গতকাল শনিবার।